জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যদি তারা আত্মসমর্পণ না করেন তবে তাদের অনুপস্থিতিতেই এ বিচারকাজ চলবে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া সত্ত্বেও তারা পলাতক ও আত্মগোপনে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, সোমবার (১৬ জুন) জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৬ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সেই সঙ্গে আগামী ২৪ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিন সকালে সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মামলার শুনানি শেষে তাদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এ মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অন্য আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পাশাপাশি ১৬ জুন তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে ওইদিন মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য ধার্য করা হয়। ওইদিন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিচারকাজটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ওই আদেশ অনুযায়ী গতকাল সকালে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ ছাড়া অন্য দুই আসামির গ্রেপ্তারের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। পরে এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে শুনানি হয়।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এ আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও (গণঅভ্যুত্থানের সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন) আসামি করা হয়। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ১ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে সেই তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।