Your Ads Here 100x100 |
---|
খবরের দেশ ডেস্ক :
মদিনার মসজিদুন নববী। বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় তীর্থস্থল। গত শুক্রবার সেখানে জুমার খুতবা দিয়েছেন শায়খ বুদাইর। খুতবায় তাঁর নির্ধারিত বিষয় ছিল আল্লাহর জিকির।
কোরআন ও হাদিসের সমন্বয়ে তিনি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন জিকিরের গুরুত্ব। শায়খ বুদাইরের খুতবার অনুবাদ করেছেন মাওলানা যাকারিয়া মাহমুদ।
হে মুসলিম জাতি! আপনারা আপনাদের প্রতিপালককে ভয় করুন। সৎ পথে চলুন।
অসৎ পথ থেকে বিরত থাকুন। কেননা আল্লাহ বলেছেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভয় করো। আর প্রকৃত মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)
মুসলিম বন্ধুরা, আল্লাহর জিকির হলো আত্মার তৃপ্তি, ক্ষতের নিরাময় ও প্রশান্তির নিদর্শন।
আল্লাহ বলেন,
وَ اذۡكُرُوا اللّٰهَ كَثِیۡرًا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে সফলকাম হও।’
(সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৫)
যে ব্যক্তি নিয়মিত আল্লাহর জিকির করে, তার ওপর আল্লাহর নুর বিকশিত হয়, বর্ষিত হয় আল্লাহর রহম, দয়া ও বরকত।
জিকির হলো, উত্তম রসদ, যার ব্যবসা লাভজনক। কবি বলেন, ‘কল্যাণপ্রত্যাশী, পুণ্যের কামনাকারী আল্লাহর জিকির আঁকড়ে ধরো!’
কেননা, যে দয়াময় আল্লাহর জিকির করে, আল্লাহ তার সঙ্গী হন। যে তাঁকে স্মরণ করে, তিনিও তাকে স্মরণের মাধ্যমে পুরস্কৃত করেন।
আল্লাহই বলেছেন,
فَاذۡكُرُوۡنِیۡۤ اَذۡكُرۡكُمۡ
‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব।
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫২)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন,
يَقُولُ اللهُ تَعَالَى أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلاَ ذَكَرْتُهُ فِي مَلاَ خَيْرٍ مِنْهُمْ
আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দার কাছে তার ধারণার অনুরূপ হয়ে থাকি। যখন সে আমার জিকির করে, তখন আমি তার সঙ্গে থাকি। যখন সে আমায় একাকী স্মরণ করে, আমি তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যখন সে আমাকে কোনো মজলিসে স্মরণ করে, আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম মজলিসের স্মরণ করি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)
হে মুসলিম জাতি, আল্লাহ তার বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, বেশি পরিমাণে তাঁর প্রশংসা করার।
বিনিময়ে তিনি নির্ধারণ করেছেন অফুরন্ত পুরস্কার ও উজ্জ্বল পরিণাম। আল্লাহ বলেছেন,
يٰۤـاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوا اذۡكُرُوۡا اللّٰهَ ذِكۡرًا كَثِيۡرًا ۙ وَّ سَبِّحُوۡهُ بُكۡرَةً وَّاَصِيۡلًا
‘তোমরা অধিক হারে আল্লাহকে স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২)
আবদুল্লাহ ইবনে বিশর (রা.) থেকে বর্ণিত,
أَنَّ رَجُلاً، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ شَرَائِعَ الإِسْلاَمِ قَدْ كَثُرَتْ عَلَىَّ فَأَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ أَتَشَبَّثُ بِهِ . قَالَ “ لاَ يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ ”
জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্য ইসলামের শরিয়তের বিষয়াদি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আমাকে এমন একটি বিষয় জানান, যা আমি শক্তভাবে আঁকড়ে থাকতে পারি। তিনি বললেন, সর্বদা তোমার জিহ্বা যেন আল্লাহ তায়ালার যিকরের দ্বারা সিক্ত থাকে।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৫)
কাজেই আপনার বেচাকেনা, আদান-প্রদান, প্রকাশ্যে, গোপনে, সকাল-সন্ধ্যায়, জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করুন। জিকির দ্বারা জিহ্বাকে সিক্ত রাখুন। জাবের (রহ.) উমাইর বিন হানি (রহ.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তো দেখি, আপনি আল্লাহর জিকির করে ক্লান্ত হন না। আপনি দিনে মোট কতবার তাসবিহ পড়েন? জবাবে ইবনে হানি (রহ.) বলেন, আমার আঙুল যদি ভুল না করে, তাহলে এক লাখ বার।
সুতরাং আমার মুসলিম ভাইয়েরা! নিজেদের মজলিসগুলোতে অযথা আলাপ, গিবত ও চোগলখোরি থেকে বিরত থেকে আসুন আমরা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করি। তাদের পথ ও পন্থা আঁকড়ে ধরে দ্বিন ইসলামের সঠিক পথে চলি। আল্লাহ আমাদের অধিক পরিমাণে জিকির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।