25 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

মিয়ানমার থেকে নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
নিউজ ডেস্ক :

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত শনিবার পর্যন্ত নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) যৌথভাবে তাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে। এই নতুন আগমনের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১৩ হাজার। তবে, নতুন আগত রোহিঙ্গাদের আইরিশ প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তকরণের অনুমতি সরকার এখনও প্রদান করেনি।

ইউএনএইচসিআর নতুন আগত রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে। গত সপ্তাহে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ে এই চিঠি পাঠানো হয়। একটি দায়িত্বশীল সূত্র রোববার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত দেড় বছরে আগত রোহিঙ্গাদের নতুন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এসেছে ২০২৪ সালের মে-জুন মাসের পর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরে প্রায় প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

গত সপ্তাহে রাখাইন থেকে ১,৪৪৮টি পরিবার এবং আলাদাভাবে আরও ৫,৯৩০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। নতুন আগত রোহিঙ্গারা মোট ২৯,৬০৭টি পরিবারের সদস্য। সীমান্তে কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও এই ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে ৫৩.৭৭ শতাংশ নারী এবং বাকিরা পুরুষ।

অন্য একটি সূত্র জানায়, নতুন আগত রোহিঙ্গারা বর্তমানে কক্সবাজারের ২০টি ক্যাম্পে তাদের আত্মীয়দের বাসায় অবস্থান করছে। এদের মধ্যে ক্যাম্প ২৭-এ ৮,৩৬৮ জন, ক্যাম্প ২৬-এ ৭,৭৭২ জন, ক্যাম্প ২৪-এ ৬,৩৯৫ জন, ক্যাম্প ৯-এ ৫,৯৫৫ জন, ক্যাম্প ১২-তে ৫,৯৪০ জন, ক্যাম্প ১ই-তে ৫,৭৮৮ জন, ক্যাম্প ১৮-এ ৫,৭৪৬ জন, ক্যাম্প ৪-এ ৫,০১৫ জন, ক্যাম্প ১৩-এ ৪,৩৩১ জন, ক্যাম্প ৭-এ ৪,১৬৫ জন, ক্যাম্প ১৭-এ ৪,১৩০ জন, ক্যাম্প ১৫-এ ৩,৯৭২ জন, ক্যাম্প ৮ই-তে ৩,৩৪০ জন, ক্যাম্প ১ডব্লিউ-তে ৩,১৯৪ জন, ক্যাম্প ২ই-তে ৩,১১০ জন, ক্যাম্প ২৫-এ ৩,১০৩ জন, ক্যাম্প ৫-এ ৩,০৩৮ জন, ক্যাম্প ১০-এ ৩,০০৫ জন, ক্যাম্প ১৬-এ ২,৮৯৩ জন, ক্যাম্প ৩-এ ২,৮৯৩ জন, ক্যাম্প ১১-এ ২,৮৩১ জন, ক্যাম্প ১৯-এ ২,৮১৫ জন, ক্যাম্প ২১-এ ২,৷৭১ জন, ক্যাম্প ২ডব্লিউ-তে ২,৪৫৭ জন, ক্যাম্প ৮ডব্লিউ-তে ২,২৬৯ জন, ক্যাম্প ১৪-এ ১,৬০৩ জন এবং ক্যাম্প ২০-এ ১,৫০৪ জন রয়েছে। কেউ কেউ ক্যাম্পের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।

ইউএনএইচসিআর সকল রোহিঙ্গার জন্য আবাসন ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। সরকার এখনও এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি। তবে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গার জন্য আবাসন ব্যবস্থা করা অত্যন্ত কঠিন। সরকার ইউএনএইচসিআরকে ক্যাম্পে বিদ্যালয়সহ অন্যান্য অবকাঠামোর বিস্তারিত তথ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। ইউএনএইচসিআর প্রস্তাব করেছে, আলাদা ঘর নির্মাণ সম্ভব না হলে দোতলা ঘর নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নানা চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির সম্মুখীন। তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যাবাসনের পরিবর্তে নতুন রোহিঙ্গাদের আগমন বাংলাদেশের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।

আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, “ইউএনএইচসিআরের কাছ থেকে এক লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গার আবাসন ব্যবস্থার জন্য চিঠি পেয়েছি। এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য নতুন ঘর নির্মাণের জায়গা আমাদের নেই।” তিনি আরও বলেন, নতুন আবাসন নির্মাণের প্রচেষ্টা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলবে, কারণ এতে রাখাইনে থাকা অন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত হবে।

সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের পর থেকে রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। জান্তা সরকার পরাজিত হওয়ার পরও এই প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন নাফ নদ ও পাহাড়ি পথে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য অর্থের ব্যবস্থা কীভাবে হবে, এমন প্রশ্নে একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের অনুমোদন পেলে ইউএনএইচসিআর দাতা সংস্থার কাছে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করবে।

নতুন আগত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারী ৩,৮৯০ জন এবং পুরুষ ৩,৯৩০ জন। ১৮-৫৯ বছর বয়সী নারী ২৭,১৭৩ জন এবং পুরুষ ১৯,৮২৫ জন। ১২-১৭ বছর বয়সী নারী ৭,৩০১ জন এবং পুরুষ ৬,৪০৮ জন। ৫-১১ বছর বয়সী নারী ১২,২০৭ জন এবং পুরুষ ১১,৭২৭ জন। ১-৪ বছর বয়সী নারী ৯,১৫৫ জন এবং পুরুষ ৯,২৫৫ জন। এছাড়া এক বছরের কম বয়সী নারী ১,২৯০ জন এবং পুরুষ ১,৩২০ জন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নানা সংকটের মুখোমুখি। দীর্ঘ আলোচনা সত্ত্বেও তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি। যৌথ সাড়াদান কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। তবে প্রতিবছর এই সহায়তার পরিমাণ কমছে, যা নতুন রোহিঙ্গা প্রবেশের কারণে বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

শেখ হাসিনা ফিরে এলে জনগনই ব্যবস্থা নিবে- বিএনপি মহাসচিব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ফ্যাসিবাদী চরিত্র নিয়ে শেখ হাসিনা আবারো ফিরে...