Your Ads Here 100x100 |
---|
নিউজ ডেস্ক :
রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে রেজিস্ট্রার এই ঘোষণা দেন। এর আগে, শনিবার বিকেল থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনে বসেন একদল শিক্ষার্থী। রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। ওই রাতেই উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১২ শিক্ষক পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড একটি তিন সদস্যবিশিষ্ট ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি’ গঠন করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন ও সংঘর্ষ ছিল নিয়মিত ঘটনা। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অস্থিরতা ছিল তুলনামূলকভাবে বিরল। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসার আশা করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা যেমন পড়াশোনার পরিবেশ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন, তেমনি বিশেষজ্ঞরাও শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবচিত্র বলছে, অভ্যুত্থানের প্রায় নয় মাস পার হলেও দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো স্বাভাবিকতা ফেরেনি।
এই সময়ের মধ্যে সংঘর্ষ ও আন্দোলনের কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছেন। পাবলিকের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও অস্থির হয়ে উঠেছে।
গত ১৯ এপ্রিল বিকেলে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে নিহত হন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় কিছু কিশোর ও যুবক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। পরদিন পারভেজের ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্রসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অজ্ঞাতনামা আরও ২০-৩০ জনকেও মামলায় আসামি করা হয়।
গত নয় মাসে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১৯টি সংঘর্ষ, নয়টি আন্দোলন এবং তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
পারভেজের আগেই, গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা এবং একই দিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে তোফাজ্জল নামে এক যুবক গণপিটুনিতে নিহত হন। এ দুই ঘটনায় মামলা চলমান, এবং অভিযুক্তদের মধ্যে কিছু গ্রেফতারও হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধ্যাপক ড. মো. আলী জিন্নাহ বলেন, “বিগত সময়ের প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব শিক্ষাঙ্গনে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের পরিবর্তে নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। এতে কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবতে শুরু করেছে এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।”
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা গত নয় মাসে অন্তত ১৩ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনটি বড় সংঘর্ষ হয়েছে। ২১ এপ্রিলের ঘটনায় পরদিন ফের রাস্তায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বিএম কলেজ, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), কুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সহিংসতায় জড়িয়েছে।
কুয়েটে ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হলে, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ২১ এপ্রিল থেকে ৩২ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। এরপর ২৪ এপ্রিল সরকার কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহার করে।
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, “নেতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলার অভাব শিক্ষাঙ্গনে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এর ফলে সংঘর্ষ বেড়েছে, এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় তারা অনির্ভয়ে এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।”
সংঘর্ষ ছাড়াও গত নয় মাসে নানান দাবিতে শিক্ষার্থীদের নয়টি উল্লেখযোগ্য আন্দোলনের নজির রয়েছে। এর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার বাকি অংশ বাতিল, সাত কলেজ আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা এবং কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অন্যতম। সর্বশেষ, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে দেশব্যাপী শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
এসব আন্দোলন ও অস্থিরতার পেছনে কোনো ইন্ধন আছে কিনা, তা তদন্তের দাবি তুলেছেন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধ্যাপক ড. এসএম হাফিজুর রহমান।
সবশেষে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, “শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আস্থার সংকটই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিকতা ফিরবে না। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।”