Your Ads Here 100x100 |
---|
নিউজ ডেস্ক :
দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে টিন দিয়ে ঘেরা একটি এলাকায় চলছিল নির্মাণকাজ। প্রায় দুই একর ৩০ শতাংশ সরকারি জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০টি দোকান। এসব দোকানের একেকটির আয়তন ৮০ বর্গফুট। নির্মাণকাজের অধিকাংশই এখন শেষ পর্যায়ে। তবে জনসাধারণের প্রবেশ সেখানে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
সাইটে স্থাপন করা হয়েছে একটি সবুজ গেট, যাতে লেখা রয়েছে: “এই প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ দ্বারা নিষেধাজ্ঞা আছে। সংরক্ষিত এলাকা, উন্নয়নকাজ চলিতেছে। বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ।”
অভ্যন্তরে কী ঘটছে, তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই।
জানা গেছে, একটি চক্র রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ভুয়া দলিল তৈরি করে এ জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন হিসেবে উপস্থাপন করছে। জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) জানিয়েছে, জমিটির মালিক সরকার, এবং অনুমোদন ছাড়াই সেখানে রাতারাতি অবৈধ নির্মাণকাজ শুরু হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, গত রোববার নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সোমবারের মধ্যে স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সেগুলো গুঁড়িয়ে দেবে।
কউকের উপনগর পরিকল্পনাবিদ মো. তানভীর হাসান রেজাউল বলেন, নির্মাণে কউকের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সহসভাপতি ওবায়দুল হাসান জমি দখলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসৈকতের জমি দখল করে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আগেও রাজনৈতিক সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা রয়েছে। বর্তমানে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একটি অংশ যুক্ত হয়ে দখলবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চক্রটিতে রয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত পৌরসভার একজন সাবেক কাউন্সিলর, কৃষক দলের নেতা, দু’জন আইনজীবী এবং ভূমি অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা।
জমি দখলের কাজে ব্যবহৃত ভুয়া দলিলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামীর জাল স্বাক্ষর রয়েছে। দলিলের তুলনাকারক হিসেবে ভূমি অফিসের নাজির মো. আলমগীর এবং নকলকারক হিসেবে কর্মচারী মো. আয়াছের নামও রয়েছে।
আরিফ উল্লাহ জানান, তাঁর স্বাক্ষর জাল করে কয়েকটি খতিয়ান তৈরি করে জায়গা দখলের চেষ্টা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
নাজির মো. আলমগীরও স্বীকার করেছেন যে, প্রতারণার মাধ্যমে ওই খতিয়ান তৈরি করে জমি দখলের চেষ্টা চালানো হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা বলেন, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভূমি অফিসের মূল রেকর্ডে সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামের কোনো মালিক নেই। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে ওবায়দুল হাসান দাবি করেন, তিনি সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে দোকান নির্মাণ করছেন এবং একটি রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দোকানগুলো উচ্ছেদ না করার নির্দেশনা রয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজার সদর উপজেলা ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে গত ১০ নভেম্বর নাজির মোহাম্মদ আলমগীর ও নকলকারক মো. আয়াছ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ভুয়া দলিলের মাধ্যমে চারটি বিএস খতিয়ান তৈরি করে দখলকারীরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আদায় করে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সচ্চিদানন্দ সেনগুপ্ত নামে যিনি রিটকারী, তাঁকে কেউ কখনো দেখেননি। তিনি আদৌ জীবিত কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়। এটি জমি দখলের একটি কৌশলমাত্র।”