26 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫

বুড়িমারী স্থলবন্দর: পাথরের শিল্পে উত্তরের অর্থনৈতিক বিপ্লব

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :

দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর। পাথর শিল্পকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে হাজারো শ্রমিকের কর্মসংস্থান, বিশাল বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞ, তবে সমান্তরালে পরিবেশ দূষণ ও সরকারি অবহেলার অভিযোগও প্রকট। ১৯৮৮ সালে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে চালু হওয়া এই বন্দরটি আজ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চালিকাশক্তি।

বুড়িমারী দিয়ে দেশের মোট পাথর শিল্পের ২৫% চাহিদা মেটে। মাসে ১২০০-১৫০০ টি ট্রাক করে ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে আমদানি হয় কয়লা, পাথর ও রাসায়নিক দ্রব্য। এখান থেকে রপ্তানি হয় ইলিশ মাছ ও ওষুধ। আমদানিকৃত বড় পাথর ভেঙে ছোট টুকরো করে দেশজুড়ে সরবরাহ করা হয়, যা কাঁচামালের চেয়ে ১০-১২ গুণ বেশি লাভ বয়ে আনে। স্থানীয় জমির মালিকরা ইজারার মাধ্যমে আগের চেয়ে ১০ গুণ বেশি আয় করছেন।

বুড়িমারীতে ১,২০০টি পাথর ভাঙার মেশিনে প্রতিদিন কাজ করেন ৩০ হাজার শ্রমিক, যার ৪০% নারী। দিনে ৪০০-৬০০ টাকা মজুরিতে কাজ করলেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি উদ্বেগজনক। হাতীবান্ধার বাসিন্দা বশির মিয়ার ভাষ্য, “৪০০ টাকায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি, এলাকায় অন্য কোনো কাজ নেই।” শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি, প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার শ্রমবাজার তৈরি হলেও সরকারি সহযোগিতা নেই।

পাথর শিল্পকে কেন্দ্রে গড়ে উঠেছে পরিবহণ, জ্বালানি, খাদ্য ও ব্যাংকিং খাত। স্থানীয়ভাবে ৩০ হাজার মানুষের আনাগোনায় জমেছে হোটেল-দোকানের ব্যবসা। ঢাকার ব্যবসায়ী সারাফাত হোসেন বলেন, “সরকারি প্রণোদনা না পেয়েও আমরা এই শিল্প টিকিয়ে রেখেছি। এটি দেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনা।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন মিয়া জানান, ৪০ হেক্টর কৃষিজমি এখন পাথর ভাঙার মেশিনে ঢাকা। তবে স্থানীয়রা কৃষির চেয়ে শিল্পে বেশি লাভবান হচ্ছেন।

পাথর ভাঙার ধুলো ও শব্দদূষণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে আশেপাশের এলাকা। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। শ্রমিকরা প্রতিদিনই কাজ করেন রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে, নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই।

শিল্পের সম্প্রসারণ ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারি পরিকল্পনার অভাব উল্লেখ করে স্থানীয়রা দাবি করছেন অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও শ্রমিক কল্যাণে জরুরি হস্তক্ষেপ। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শিল্পের উন্নয়ন ও পরিবেশ সমন্বয় করে টেকসই পরিকল্পনা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের মঙ্গাপীড়িত মানুষের জন্য বুড়িমারী আজ আশার আলো। কিন্তু দূষণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই সম্ভাবনাময় শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সঠিক নীতিমালা ও বিনিয়োগে এই অঞ্চল হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন ইঞ্জিন।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

সব ধরনের জালানির দাম কমলো ১ টাকা

নিউজ ডেস্ক আগামীকাল থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেল — ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন এবং পেট্রোল — এর দাম গত মাসের চেয়ে...