26 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মে ২২, ২০২৫

কীটনাশকে বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

সদ্য বোরো ধান উঠেছে ঘরে। সার ও কীটনাশক বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও ভালো ফলনে কৃষকের মাঝে তৃপ্তির ঢেকুর। তবে উচ্চ ফলনের আশায় বোরোসহ বিভিন্ন ফসলে নিয়ন্ত্রণহীন সার ও কীটনাশক প্রয়োগে ঝুঁকিতে পুরো জীববৈচিত্র্য। বালাইনাশক ব্যবহারে কীটপতঙ্গ আসে না ফসলের ধারেকাছে, হানা দিলেও মারা পড়ে। এতে প্রতি বছর লাফিয়ে বাড়ছে ফসলি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার। কিন্তু অতিরিক্ত কীটনাশকে মারা পড়ছে পরাগায়নে সবচেয়ে জরুরি মৌমাছিসহ উপকারী পতঙ্গ। প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ শিকারে ব্যবহার করায় হারিয়ে যাচ্ছে শামুক-ঝিনুকসহ অনেক জলজ প্রজাতি।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ২২ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন আয়োজনে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফসল উৎপাদনে পরাগায়নের বিকল্প নেই। আর এ ক্ষেত্রে কিছু কীটপতঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কিন্তু উদ্বেগজনক হলেও সত্যি, দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমছে ফসলের জন্য উপকারী কীটপতঙ্গ। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় শস্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ভয়াবহ সংকটে পড়বে পুরো কৃষি ব্যবস্থা। এ জন্য কীটনাশক ব্যবসা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে শক্ত নজরদারি দরকার। বিষমুক্ত বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবনও জরুরি। পাশাপাশি জমিতে পরিমিত সার প্রয়োগ এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার না করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

দেশে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের চিত্র বোঝা যাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য দেখলেই।  সংস্থাটি থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে বালাইনাশকের ব্যবহার ছিল চার হাজার টন। ১৯৮০ সালে পাঁচ হাজার টন এবং ২০০০ সালে এটি বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার টনে। এর পর মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে (২০২২ সালের হিসাব) বালাইনাশকের ব্যবহার অস্বাভাবিক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার টনে। পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক অংশীদারদের পরিচালিত একটি জরিপ অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ১১ ধরনের কীটনাশক খুচরা দোকানে পাওয়া যায়।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, এক সময় হাওরে চাষাবাদ হতো প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে। বর্তমানে ঠিক তার উল্টো। এখন শতভাগ জমিতে হাইব্রিড-উফশী জাতের ধান চাষ হয়। ফলন বাড়াতে কৃষক রিফিট, সার, বিষ ও বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এর ফলে মাছসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ ধ্বংস হচ্ছে। কীটপতঙ্গ কমে যাওয়ায় খাদ্যের অভাবে পাখপাখালিও কমে যাচ্ছে।

বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা যায়, দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে চলতি বছর শুমারিতে ৬০ প্রজাতির মোট ৩৫ হাজার ২৬৮ পাখি পাওয়া গেছে। অথচ এক বছর আগে ২০২৩ সালের শুমারিতে পাওয়া যায় ৫২ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৭৭৮ পাখি।

একই অবস্থা লাখ লাখ প্রাণীর আশ্রয়স্থল সুন্দরবনের। বিষ দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরায় বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের জীববৈচিত্র্যও ঝুঁকিতে। কৃষি ও মাছের ঘের তৈরিতে ব্যবহৃত কীটনাশক নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে সুন্দরবনে। অথচ সুন্দরবনঘেঁষা এলাকায় কোনো কৃষিকাজ হয় না বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কৃষির নামে কেনা এই বিষ দিয়েই সুন্দরবনের নদী-খালে চলে মাছ শিকারের মহোৎসব।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুন্দরবনসংলগ্ন খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে ১৭৩ জন পাইকারি ও ২ হাজার ৫২০ খুচরা কীটনাশক বিক্রেতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে খুলনায় ১ হাজার ২৫৬ জন, বাগেরহাটে ১৮ জন এবং সাতক্ষীরায় ১ হাজার ৩৭৪ জন।

মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে বিপন্নের পথে পরাগায়নে অতি জরুরি মৌমাছিও। নর্থ বেঙ্গল হানি কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজের জাহাঙ্গীর আলম জানান, পৃথিবীর ৮৬ শতাংশ পরাগায়ন মৌমাছির মাধ্যমে হয়। অথচ দেশে বর্তমানে ৬ প্রজাতির মৌমাছির মধ্যে চারটিই বিলুপ্তির পথে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, মৌমাছি শুধু মধু উৎপাদন করে না, খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও অসাধারণ ভূমিকা রাখে। পরাগায়নের মাধ্যমে তারা কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। অথচ কীটনাশক প্রয়োগে সেই মৌমাছিই মারা পড়ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, কীটনাশক প্রয়োগে উপকারী পোকামাকড়ের ডিম-লার্ভা মারা যায়। এর অতিরিক্ত ব্যবহার জনস্বাস্থ্য তো বটেই, পুরো প্রাণিকুলকেই মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। যথাযথ রেজিস্ট্রেশন, মৌসুমি সংরক্ষণ এবং আবহাওয়া বিবেচনায় কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে নতুন নতুন কোম্পানি বালাইনাশক নিয়ে হাজির হচ্ছে। তারা মাঠ পর্যায়ের ডিলারদের বেশি কমিশন দিয়ে প্রলুব্ধ করছে। উপজেলার সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা ভেজালবিরোধী কার্যক্রম চালালেও বিভিন্ন কারণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ৬৬-৬৮টি জেনেরিক কীটনাশকের মধ্যে দেশে প্রায় ৪ হাজার ৮০০-এর মতো আইটেম আছে। এর পরও ১ হাজার ২০০ নতুন আইটেম বাজারে আনতে চান ব্যবসায়ীরা। আমি সেগুলো স্থগিত রেখেছি। কীটনাশকের বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আনা দরকার। এ জন্য বর্তমান বিধিমালা ও নীতিমালা পর্যালোচনা করা দরকার। এটি যুগোপযোগী করে কৃষক ও ব্যবসায়ীবান্ধব করার প্রক্রিয়া চলছে।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

বালুকাণ্ডে বরিশালের ডজনখানেক বিএনপি নেতার পদ স্থগিত

  খবরের দেশ ডেস্কঃ মেঘনা নদীতে বালু মহালের ইজারা বাগাতে এক সেনা সদস্যকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় বরিশাল বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ...