Your Ads Here 100x100 |
---|
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
উত্তর প্রদেশের এক ছোট গ্রামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ একটি ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা এবং সমাজের দায়বদ্ধতা।
১২ বছরের এক দলিত ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার পাড়ারই ৫ জন কিশোরের বিরুদ্ধে। প্রত্যেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক—বয়স ১২ থেকে ১৫-এর মধ্যে। তারা একই অঞ্চলের স্কুলের ছাত্র, কেউ সপ্তম, কেউ অষ্টম, কেউবা নবম শ্রেণিতে পড়ে।
ঘটনাটি ঘটে গত ৮ মে, তবে বিষয়টি সামনে আসে বেশ কয়েক দিন পর, যখন নির্যাতিতার মা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও দেখে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ভিডিওতে ছাত্রীর উপর হওয়া পাশবিক নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে তা ভাইরাল করার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা।
সেদিন বিকেলে বাড়ির পাশে মাঠে খেলতে গিয়েছিল ছাত্রীটি। অভিযোগ, অভিযুক্তরা তাকে মাদক মেশানো কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়ায় এবং পাশের একটি স্কুলের ফাঁকা কক্ষে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। স্কুলটি এক অভিযুক্তের আত্মীয়ের কর্মস্থল। সেখান থেকেই সংগ্রহ করা হয় চাবি।
স্থানীয় পুলিশের ইনস্পেক্টর মনীশ সাক্সেনা জানান, “ভুক্তভোগী ছাত্রীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তারা সবাই দলিত সম্প্রদায়ের।”
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া যৌন অপরাধের সংখ্যা ছিল ১,১৩০টি ধর্ষণের মামলা এবং ৮৭৪টি যৌন হেনস্থার অভিযোগ। ১৬-১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে সর্বাধিক অভিযোগ থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে ১২-১৪ বছর বয়সিরাও এই তালিকায় উঠে আসছে।
শিশু অধিকার কর্মী প্রশান্ত কুমার দুবে বলেন, “যৌন কন্টেন্টে অবাধ প্রবেশ, প্রযুক্তির অপব্যবহার, মাদকাসক্তি এবং পারিবারিক নজরদারির অভাব—এই সমস্তই কিশোরদের অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
শিশু মনোবিজ্ঞানী সত্যগোপাল দে বলেন, “বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা না করাই মূল সমস্যা। এই সময় তারা ইন্টারনেট এবং বন্ধুদের থেকে ভুল তথ্য পাচ্ছে।”
প্যারেন্টিং বিশেষজ্ঞ পায়েল ঘোষ বলেন, “অভিভাবকদের উচিত শিশুদের কথা শোনা, ভয় না দেখিয়ে বোঝানো। শুধুমাত্র ফোন হাতে ধরিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না।”
এই ঘটনা শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, গোটা দেশের শিশু সুরক্ষার ছবিকে আরও একবার কালিমালিপ্ত করল। প্রশ্ন উঠছে, কিশোর বয়সেই কেন এমন ভয়ানক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে শিশুরা? প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজ এবং পরিবারের দায়িত্ব এখন সবচেয়ে বড়।