Your Ads Here 100x100 |
---|
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজায় তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে অবরুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজা উপত্যকায় সহিংসতা বন্ধের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা আবারও ব্যাহত হলো।
বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোট দিয়ে সেটি বাতিল করে দেয়। প্রস্তাবটিতে গাজায় আটক ইসরায়েলিদের মুক্তির কথাও উল্লেখ ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, যুদ্ধবিরতির বিষয়টি বন্দিমুক্তির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়, তাই এটি “শুরুতেই অগ্রহণযোগ্য”।
ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বলেন, “ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, যার মধ্যে হামাসকে পরাস্ত করা এবং ভবিষ্যতে এমন হুমকি থেকে মুক্ত থাকার নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত।”
চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, “ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অথচ একটি দেশের সুরক্ষার কারণে এই লঙ্ঘনের জন্য কেউ জবাবদিহি করছে না।”
আল–জাজিরার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা মন্তব্য করেন, “এই ভেটো যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একাকী করে দিয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ দেশ তাদের অবস্থানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।”
গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চল ও দেইর আল-বালাহতে বুধবার দিনভর ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র বিমান ও স্থল হামলা চলে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শুধু ওই দিনেই কমপক্ষে ৯৭ জন নিহত ও ৪৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সহায়তাপ্রাপ্ত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (HHF)-এর সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায়। গত ২৭ মে থেকে এসব সহায়তা কেন্দ্রের কাছে শতাধিক ফিলিস্তিনি গুলিতে নিহত হন এবং শত শত মানুষ আহত হন।
একজন নিহত নারী রীম আল-আখরাসের সন্তান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আম্মু শুধু আমাদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছিলেন, আর সেই পথেই তাঁর মৃত্যু হলো।” নিহতের স্বামী বলেন, “মানুষ প্রতিদিন মরছে। এটা সাহায্য নয়, এটা একটা ফাঁদ।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা আছে, সামর্থ্য আছে, অভিজ্ঞতাও আছে—আমাদের কাজ করতে দিন। সীমান্ত খুলে দিন, যাতে পর্যাপ্ত সাহায্য প্রবেশ করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের গাড়িগুলো যেন নিরাপদে চলতে পারে, তা নিশ্চিত করুন।”
জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় সহায়তা পৌঁছাতে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রধান বাধা হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল দাবি করে, সহায়তা হামাস ছিনিয়ে নেয়। তবে হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানায়, তারা এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ পায়নি।
ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজা থেকে জানান, “আমি শিশুদের দেখেছি যারা ক্ষুধার তাড়নায় কাঁদছে, তাদের পাঁজরের হাড় বেরিয়ে গেছে। তারা খাবারের জন্য মিনতি করছে।”
ইসরায়েল দাবি করে, গাজায় হামাসের হাতে এখনো ৫৮ জন বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জীবিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৬০০–এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ, যাদের মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বহু মিত্র দেশ গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের এই ভেটো তার একক অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করেছে। গাজায় মানবিক বিপর্যয় দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে—কিন্তু যুদ্ধ থামানোর পথ এখনও অনিশ্চিত।