বিষে ভরা ফর্সাকারী ক্রিম: ২৬টির মধ্যে ২২টিতেই বিপজ্জনক পারদের উপস্থিতি

খবরের দেশ ডেস্কঃ

২০২৪–২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন মার্কেট ও অনলাইন স্টোর থেকে সংগ্রহ করা ২৬টি ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মধ্যে ২২টিতে মারাত্মক মাত্রার পারদ পাওয়া গেছে—এটি আন্তর্জাতিক নিরাপদ সীমা (১ ppm) একাধিক গুণের উর্ধ্বে।

পরিবেশবাদি গবেষণা সংস্থা Environment and Social Development Organization (ESDO)-র  এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, Due Beauty Cream-এর পারদের মাত্রা ছিল ২৪,৮০০ ppm, আর Golden Pearl Beauty Cream–এ পাওয়া গেছে ২০,৭০০ ppm; উভয়ই বিপজ্জনক মাত্রার বহুগুণ বেশি । আরও ক্ষুদ্র নামের অনেক ক্রিমে ৭৪০০–১৫,৫০০ ppm পর্যন্ত পারদ পাওয়া গেছে।

এই সব তথ্য ESDO-এর ২০১৭–১৮ সালের নিয়মিত মনিটরিং প্রোগ্রামের উপর ভিত্তি করে। X-ray Fluorescence (XRF) মেশিনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে যে সব পণ্যে মার্সারি বিপজ্জনক মাত্রায় রয়েছে ।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘমেয়াদি পারদব্যবহারে ত্বক ব্যথা, আলসার, কিডনি ও স্নায়ুকোষে প্রভাব, চোখ–ফুসফুস–যকৃত প্রভৃতিতে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে পারে; প্রেগন্যান্ট মহিলার ভ্রূণও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে ।

ESDO সূত্রও জানাচ্ছে, Bangladesh Standards and Testing Institution (BSTI) ২০১৯ সালে ১৭টি পারদযুক্ত ক্রিম নিষিদ্ধ করলেও, তা এখনো অনলাইনে ও দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। পর্যবেক্ষণে সমাজ সচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারি–বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক অংশগ্রহণ জরুরি বলেও মত তারা ।

ESDO সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম বলেন, “ব্যান থাকলেও পণ্যগুলো বাজারে আছে, এটা উদ্বেগজনক।” BSTI–র উপ–পরিচালক এস.এম. আবু সাঈদ জানান, মোবাইল কোর্ট চালানো হচ্ছে এবং তারা অনলাইন মনিটরিং করছে।

ওই সময়ে ESDO–র ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “পারদ দেহে তীব্র ক্ষতি করতে পারে, ধীরে ধীরে গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে।” তিনি সতর্ক করেছেন, পারদযুক্ত ক্রিম “তাত্ক্ষণিক উপসর্গ না দেখিয়ে ধীরে ধীরে স্নায়ু ও বয়সজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও Zero Mercury Working Group মনে করিয়ে দিয়েছে, পারদজনিত সৌন্দর্য পণ্য দীর্ঘমেয়াদে নড়াতন্ত্র, কিডনি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভঙ্গ করে এবং শিশু ও গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য মারাত্মক্য ।

তারাই শিশু ও পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ESDO–সহ BAN Toxics জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী পারদযুক্ত ক্রিমের অবৈধ সীমান্ত–পণ্য রফতানিতে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ প্রয়োজন ।

শেষ কথা: পারদবিহীন নিরাপদ বিকল্প বেছে নেওয়া এখন অনিবার্য। পণ্যের প্যাকেজে BSTI মার্ক রাখা আছে কিনা ও “পারদবিহীন” লেবেল খেয়াল করুন। না হলে নিজ এবং পরিবার তথা পরিবেশের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন আপনি।