Your Ads Here 100x100 |
---|
আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মেলা এক সুপরিচিত নাম। বছরের বিভিন্ন সময় মেলার আয়োজন করা হয় বঙ্গাব্দ ও খৃস্টাব্দ সনকে ঘিরে। এ দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠান তথা মেলায় নানা পেশা ও শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করে। বিশেষত তারা কেউ বিক্রেতা, কেউবা ক্রেতা আবার কেউ দর্শনার্থীর কাতারে থাকে। দেশের যে কোন অবস্থায় কিন্তু থেমে নেই এসব মেলার আয়োজন আর দর্শক সমাগম। বিশেষ করে বইমেলায় সবার স্বতঃস্ফূত অংশগ্রহণ বলে দেয় এদেশের মানুষের রুচি আর শিল্পজ্ঞান। বাণিজ্যমেলা শেষ না হতেই প্রচলিত নিয়মে শুরু হয় বইমেলা। পুরোদমে চলছে বইমেলার প্রস্তুতি। ঠক ঠক খট খট শব্দে চলছে কাজ। আবেগ-উচ্ছ্বাস আর ভালবাসায় ফেব্রুয়ারির বইমেলাকে সাজাতে ব্যস্ত এখন মেলা সংশ্লিষ্টরা। এই বইমেলা স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের কথা যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বইমেলা উপলক্ষে প্রতিবছর প্রকাশিত হয় নতুন পুরনো লেখকদের অনেক বই। বই প্রেমীদের জন্য, লেখক প্রকাশকদের জন্য এবং পড়ুয়াদের জন্য একটি ভিন্নধর্মী মাস হচ্ছে এই ফেব্রুয়ারি মাস। এই বইমেলা ঘিরে অনেক কথা হয়, অনেক লেখালেখি হয় প্রতিবছর। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। দিনে দিনে বই মেলার বহর বেড়েছে, বেড়েছে ক্রেতা, প্রকাশকের সংখ্যা। বইমেলার সুযোগ সুবিধাও বেড়েছে সামান্য কিছু পুরনো সমস্যা ছাড়া। গত বছর বইমেলায় আসা অনেক বিদেশী অতিথিগণ বলেছেন যে, তারা বাংলা সাহিত্য পড়তে চান, বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চান কিন্তু বাংলার আধুনিকালের লেখকদের ইংরেজিতে অনূদিত বই তারা পাচ্ছে না, ফলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষের এই ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত। বিভিন্ন পাবলিকেশনেরও উচিত এ সময়কালের বিখ্যাত লেখকদের বই ইংরেজিতে অনুবাদ করা। তাহলে আমাদের সমকালীন সাহিত্যের বিষয়বস্তু জানতে পারবেন দেশের সীমানার বাইরের পাঠকগণও। বাংলা একাডেমির অনুবাদ শাখাকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়টি বার বার আলোচনায় এসেছে। বিভিন্ন ভাষায় আমাদের সাহিত্যের অনুবাদ শাখাকে শক্তিশালী করা উচিত। এই শাখা থেকে যেমন বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের বই ইংরেজিতে অনুবাদ করা হবে, তেমনি অন্যান্য ভাষার বিখ্যাত গ্রন্থাবলীও বাংলায় অনূদিত হওয়া উচিত, তাতে আমাদের সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হবে। গতবারের বইমেলায় ছোট ছোট প্রকাশনা সংস্থা এবং নিজ উদ্যোগে যেসব বই প্রকাশিত হয়েছে তাদের বই বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হয় জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের স্টলে। হরতাল-অবরোধ সত্ত্বেও গতবারের মতো এত পাঠকর সমাবেশ আগে কখনও হয়নি। এ বছর আশা করা যায় বইপ্রেমী মানুষের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠবে মুখর। নানা প্রতিকূলতাকে সঙ্গে করে বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্প সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বইয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন লেখক প্রকাশকসহ বিভিন্ন ধরনের এবং পর্যায়ের লোকজন। কোন ব্যক্তির ভাবনা ও পরিকল্পনা লিখিত আকারে বাঁধাই করা বইয়ের মোড়কে হাতে পৌঁছাতে অনেক ধাপ পার হতে হয়। লেখা থেকে শুরু করে কম্পোজ মেকআপ-ট্রেসিং-প্লেট- প্রচ্ছদ- ছাপা-বাঁধাই-বাজারজাতকরণ- সবকিছু মিলিয়ে এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে ওঠার ব্যাপারটি প্রকাশনাশিল্পের আওতা। বাংলাদেশে যদিও নানা শিল্পের ভিড়ে এখনও প্রকাশনা খাতটি শিল্পের যথাযথ মর্যাদা লাভ করে উঠতে পারেনি, তবু সাম্প্রতিককালে তা বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। নতুন কাগজের গন্ধ, কাচা বাঁধাইয়ে আসা নরম বই- এ যেন এক ভিন্নতর উন্মাদনার জায়গা। সঠিক কোন পরিসংখ্যান বা গবেষণা নেই প্রতিবছর কি পরিমাণ লোক সমাগম বাড়ছে বইমেলায়। বাংলা একাডেমি কাজটি করতে পারে। বছর বইমেলায় আসা অনেক বিদেশী অতিথিগণ বলেছেন যে, তারা বাংলা সাহিত্য পড়তে চান, বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চান কিন্তু বাংলার আধুনিকালের লেখকদের ইংরেজিতে অনূদিত বই তারা পাচ্ছে না, ফলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষের এই ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত। বিভিন্ন পাবলিকেশনেরও উচিত এ সময়কালের বিখ্যাত লেখকদের বই ইংরেজিতে অনুবাদ করা। তাহলে আমাদের সমকালীন সাহিত্যের বিষয়বস্তু জানতে পারবেন দেশের সীমানার বহিরের পাঠকগণও। গতবারের বইমেলায় ছোট ছোট প্রকাশনা সংস্থা এবং নিজ উদ্যোগে যেসব বই প্রকাশিত হয়েছে তাদের বই বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হয় জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের স্টলে। প্রকাশনা জগত অনেক দূর আগানো সত্ত্বেও আমাদের দেশে এটি এখনও পুরোপুরি শিল্পের রূপ পায়নি। ইউরোপে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও ব্যক্তিমানুষের কাছে প্রকাশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হিসেবে বিবেচিত। অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি সেখানে সংস্কৃতি, তথ্য, শিক্ষা, গণতন্ত্র প্রভৃতির সঙ্গেও জড়িত। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্য দেশে আভ্যন্তরীণ আয়ের ০.৫ শতাংশ আসছে প্রকাশনা খাতে থেকে। আর এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ। প্রায় ৬৪ হাজার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ইউইর সদস্য দেশ ছাড়াও পৃথিবীর প্রায় ৩৬ দেশে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রকাশক ও প্রকাশনাশিল্প কাজ করে যাচ্ছে। বরাবরই একুশের বইমেলায় ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি হয়। আর বাংলা একাডেমি যথারীতি ৩০ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করে। এবারও এমন ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রকাশনা শিল্প সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত। আমরা এই মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে, এই শিল্পের দেহে সঠিক পুষ্টি প্রদান করার। বইমেলার আগ্রহ ও উৎসাহ ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে বিভাগীয় ও জেলা শহরেও। তরুণদের যদি বইমুখী করা যায়, পড়াশোনামুখী করা যায় তাহলে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই যুগে তা গোটা জাতির জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়।