26.6 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩১, ২০২৫

কমিশন না হওয়ায় পুলিশে হতাশা

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

জুলাই গণ-অভুত্থানের পর পুলিশ সদস্যদের আশা ছিল, তাঁরা স্বাধীনভাবে আইন অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন এমন ব্যবস্থা তৈরি হবে। কিন্তু ‘পুলিশ কমিশন’ চাওয়ার পরও তা না হওয়ায় বাহিনীটির সদস্যদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন না হওয়ায় তাঁদের আগের মতোই রাজনীতিবিদদের আজ্ঞাবহ হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি থেকে শুরু করে কথায় কথায় বল প্রয়োগের মতো বিষয় থেকেও বেরিয়ে আসতে পারবে না গুরুত্বপূর্ণ এই বাহিনী।

এতে নিরীহ মানুষ আগেও যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো সেটাই চলতে থাকবে। 

এ বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা পুলিশ স্বাধীন হবে, সেটা বলছি না। আমরা বলছি পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবের বলয় থেকে বেরিয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ কমিশন সাধারণ মানুষের জন্য লাভজনক।

এক পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, বহু বছর ধরে পুলিশকে রাজনৈতিক নেতারা ব্যবহার করে আসছেন। ফলে নিরীহ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় কোনো একটি থানায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ নেই পুলিশের। এমনকি স্থানীয় এমপি ওসি নিয়োগের তদবির করেন। তাঁর পছন্দমতো ওসিকে বসিয়ে পছন্দমতো অপরাধ করেন তাঁর দলীয় নেতাকর্মীরা।
পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকলেও তাদের পরিস্থিতি তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এই সুযোগে বিরোধী মত দমন থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, সরকারি ও বেসরকারি ভূমি দখল, যাকে-তাকে মারধর, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দেওয়ার কার্যক্রম চলে। তবে পুলিশ যদি আইন অনুযায়ী তার কাজ করতে পারত, তাহলে এ ধরনের অপরাধ কমে যেত। এ জন্য প্রয়োজন পুলিশ কমিশন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন হলে তাতে পুলিশ কমিশন করার বিষয়ে জোর দাবি ওঠে। এমনকি পুলিশের পক্ষ থেকেই একটি শক্তিশালী স্বাধীন ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

প্রস্তাব অনুযায়ী, পুলিশের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও পুলিশের কর্মকাণ্ড তদারকির দায়িত্বে থাকবে এই কমিশন। এতে রাজনৈতিক আনুগত্য বিবেচনায় পদোন্নতি ও নিয়োগের পুরনো সংস্কৃতির অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।

আইজিপি বাহারুল আলম পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধানের কাছে এই খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন। এতে বলা হয়েছিল, কমিশনের লক্ষ্য হলো পুলিশ যেন নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও জন-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে, তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া এর লক্ষ্য আইনের শাসন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করা। তবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া পুলিশ সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের সুপারিশ নেই। তবে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।

সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম চলার সময় কিভাবে পুলিশ কমিশন গঠন করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয় অনলাইনে জরিপের মাধ্যমে। জরিপে অংশ নেওয়া ১৪ হাজার ৩৮৯ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৫৮.৯ শতাংশ পুলিশের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে একটি পৃথক তদারকি সংস্থা গঠনের পক্ষে মত দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমিশন গঠনের লক্ষণ দেখতে না পেয়ে হতাশ পুলিশ কর্মকর্তারা।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আইজিপি থেকে শুরু করে ওসি পর্যন্ত সরকারদলীয় মন্ত্রী ও এমপিদের পছন্দের লোকজনকে বসানো হয়। ফলে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা লোভনীয় পদগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য রাজনীতিকদের পকেটের লোক হয়ে যান। আর পুলিশকে ম্যানেজ করতে পারার কারণে অসাধু রাজনীতিবিদ নিজে এবং তাঁর সহযোগীরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে সক্ষম হন। অনেক অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদেরকে সহযোগিতা করে নেতার মন জয়ের চেষ্টা করেন। নেতাও খুশি হয়ে ওই কর্মকর্তাকে ভালো জায়গায় পদ বা পদোন্নতি দেওয়ার জন্য তদবির করেন। এভাবেই পুলিশ দালীয় পুলিশে পরিণত হয়ে যায়। ফলে দেশের নিরীহ মানুষ বঞ্চিত হয় প্রকৃত বিচার থেকে। সরকারদলীয়দের অন্যায় অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে।

পিএইচডি গবেষক পুলিশ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) মো. ইমরান আহম্মেদ একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন, “পুলিশ আইন ১৮৬১-এর ২৩ ধারা অনুযায়ী, ‘প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হইবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সকল বৈধ আদেশ ও পরোয়ানা দ্রুত পালন ও কার্যকর করা।’ অথচ এই আইনের কোথাও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত আদেশের বৈধতা বা অবৈধতা নিরূপণ বা চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি অবৈধ আদেশ না মানার সুযোগ বা এসংক্রান্ত কোনো আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। কাজেই বিদ্যমান আইনে পুলিশ সরকারের হুকুম মানতে বাধ্য। এ কারণেই গত জুলাই আন্দোলনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের নির্দেশনা মেনেই পুলিশকে বল প্রয়োগ করতে হয়েছে। আপনি হয়তো আমার সঙ্গে দ্বিমত হতে পারেন, তবে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এর বিকল্প কিছু করার সুযোগ কি পুলিশের ছিল বা আছে? পুলিশ যদি সরকারের আদেশ না মানত, তাহলে সেটি কি পুলিশ আইনের লঙ্ঘন হতো না? অথচ মানুষ পুলিশের কাজকে সরকারি কাজ হিসেবে বিবেচনা না করে বরং পুরো ক্ষোভটাই পুলিশের ওপর ঝাড়ল। নিহত হলেন, আহত হলেন অসহায় পুলিশ সদস্যরা। কিছু ব্যতিক্রম বাদে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। সত্যিকার অর্থে, স্বাধীন পুলিশ কমিশন ও পুলিশ আইন সংস্কার করার দাবির মাধ্যমে পুলিশ যেকোনো কর্তৃপক্ষের অবৈধ, অন্যায় ও বেআইনি হুকুমকে জোরালোভাবে ‘না’ বলার সুযোগ চায়। রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়; যেখানে যেকোনো রাজনৈতিক শক্তি তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পুলিশকে ব্যবহার করতে পারবে না। পুলিশ এমন একটি ব্যবস্থা চায়, যেখানে জবাবদিহির আওতায় থেকেই বাংলাদেশ পুলিশ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। বাংলাদেশ পুলিশের এই চাওয়া কি খুব বেশি অযৌক্তিক? এটি কি গণমানুষের চাওয়া নয়? আগামী দিনের বাংলাদেশ বিনির্মাণে এর বিকল্প আছে কি?”

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

ক্যালিফোর্নিয়ায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। যুদ্ধবিমানটি লেমুর নেভাল এয়ার স্টেশনের কাছে ভেঙে পড়ে। তবে পাইলট...