Your Ads Here 100x100 |
---|
বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে ৫৩ জন নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, দূষণ এবং তামাকজাত পণ্য সেবনের কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নতির পথে থাকলেও, ক্যানসার শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা এখনো অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
গতকালের এক গবেষণা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আতিকুল হক বলেন, মানুষের মধ্যে ক্যানসারের প্রকোপ বুঝতে হলে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন থাকা প্রয়োজন। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান এমনকি আফগানিস্তানে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন থাকলেও বাংলাদেশে তা ছিল না। বিএসএমএমইউ এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বিএসএমএমইউর গবেষকেরা ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ক্যানসার নিবন্ধন শুরু করেন। এরপর ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে এ বছরের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩,৪১১টি পরিবারের তথ্য দ্বিতীয়বার সংগ্রহ করা হয়। এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
মূল উপস্থাপনায় বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, হোসেনপুরের মানুষের মধ্যে ৩৮ ধরনের ক্যানসারের সন্ধান পাওয়া গেছে। ক্যানসার রোগীদের ৯৩ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে। ১৮ বছরের কম বয়সের বেশ কয়েকজন ক্যানসার রোগীও পাওয়া গেছে। বেদনাদায়ক বিষয় হলো, ৭ শতাংশের বেশি ক্যানসার রোগী কোনো ধরনের চিকিৎসা নেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, হোসেনপুরের পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যানসার স্বরযন্ত্র, পাকস্থলী, ফুসফুস, ঠোঁট ও মুখগহ্বর এবং খাদ্যনালিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, নারীদের মধ্যে স্তন, জরায়ুমুখ, ঠোঁট ও মুখগহ্বর, থাইরয়েড এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের হার বেশি।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ক্যানসার রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কিডনি রোগের প্রকোপ দেখা গেছে। বেশিরভাগ পুরুষ রোগীর ধূমপানের ইতিহাস রয়েছে, যা ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ বলে গবেষকেরা মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞরা ক্যানসার প্রতিরোধে তামাকজাত পণ্য পরিহার, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরিবেশ দূষণ রোধ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। পাশাপাশি, ক্যানসার প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত বিভাগ চালু, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এবং কম খরচে চিকিৎসার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে ক্যানসার একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে সাধারণ মানুষ দ্রুত ও কম খরচে চিকিৎসা পেতে পারে।