লিও তলস্তয় শুধু একজন সাহিত্যিক নন পাশাপাশি একজন দার্শনিক বটে। তার দর্শন ছিলো চার্চের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে আসল ধর্মচর্চা করা ও অভিজাততন্ত্রকে বর্জন করা। এছাড়া তিনি অহিংস আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন যার দ্বারা ভারতের বাপুজি গান্ধী অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
বিখ্যাত ফরাসি বিপ্লবও তার সাহিত্যদর্শন থেকে অনুপ্রাণিত ছিলো। তিনি তার দর্শন প্রচার করে অনেকের চক্ষুসূল হলেও সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি তার অত্যধিক জনপ্রিয়তার কারণে। যদিও বিখ্যাত অক্টোবর বিপ্লবের পূর্বেই তার জীবনাবসান হয়েছিলো কিন্তু তিনি এই বিল্পবের পূর্বেই তার দর্শন দ্বারা এই বিপ্লবকে উদ্বেলিত করেছিলেন। তিনি ইউরোপ ভ্রমণের সময় একটি মৃত্যুদন্ড স্বচক্ষে দেখে তার বন্ধু ভ্যাসিলি বটকিনকে বলেছিলেন, ” সত্য কথা হলো রাষ্ট্র একটি ষড়যন্ত্র যা শুধু শোষণের জন্যই নয় সর্বোপরি তার নাগরিকদের দুর্নীতি করার জন্যই তৈরি হয়েছে।
১৮৭০-এর দশক থেকে লিও টলস্টয় এক গভীর আধ্যাত্মিক সংকটে পড়েন। তিনি নিজেকে খ্রিস্টান নৈরাজ্যবাদী হিসেবে গড়ে তোলেন, যেখানে তিনি সরকার এবং আইনের অধিকারী তত্ত্বগুলিকে একদম অস্বীকার করেন। টলস্টয় বিশ্বাস করতেন, যীশু খ্রিস্ট এর শিক্ষা এবং নৈতিকতা অনুসরণ করে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব। এই চিন্তাধারা তিনি তার “কনফেশন” (১৮৮২) বইতে ব্যক্ত করেছিলেন। টলস্টয় এর বিশ্বাস ছিল, যে ব্যক্তি সত্যিকারের খ্রিস্টান হতে চায়, তাকে অহিংসার পথে হাঁটতে হবে এবং নিজের ভিতরের সত্যের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। তার লেখা “দ্য কিংডম অফ গড ইজ উইথIN ইউ” (১৮৯৪) এই বিশ্বাসের শক্তিশালী প্রমাণ। তাঁর এই চিন্তাভাবনা সমাজের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছিল, যা পরবর্তীতে মহাত্মা গান্ধী এবং মার্টিন লুথার কিং এর অহিংস আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল।
লিও টলস্টয় তার জীবনের বেশ কিছু সময় জুড়ে রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে গভীর চিন্তা করেছেন। তিনি সরকার এবং আইন কে সঠিক বলে মনে করেননি। তার মতে, সরকার মানুষের স্বাধীনতা কে আক্রমণ করে এবং সমাজে একটি শোষণমূলক ব্যবস্থা সৃষ্টি করে। টলস্টয়নৈরাজ্যবাদ এবং অহিংসা বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং বিশ্বাস করতেন যে শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ মানবিক পরিবর্তন দিয়েই সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব।এছাড়া, তার লেখাগুলি সমাজের প্রতি তার শান্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গড়ে উঠেছে। তিনি যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন এবং সব সময় অহিংসা এবং শান্তির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন।
লিও টলস্টয় ১৯১০ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তাঁর সাহিত্যকর্ম এবং চিন্তাভাবনা বিশ্বব্যাপী সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য একটি অমর উত্তরাধিকার রেখে গেছে। তিনি ছিলেন এক মহৎ চিন্তাবিদ, একজন মহা লেখক, এবং একজন সমাজ সংস্কারক। টলস্টয় এর মৃত্যুর পর রাশিয়া এবং পৃথিবীজুড়ে তাঁর কর্মের স্ফুরণ ঘটেছে।
লিও টলস্টয় তাঁর জীবনে অনেক লেখা রেখে গেছেন যা আজও মানুষের হৃদয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। তার সাহিত্য এবং দর্শন ভবিষ্যতেও বিশ্বকে গাইড করবে এবং নতুন চিন্তাভাবনা তৈরির জন্য প্রেরণা দিবে।
লিও টলস্টয় এর রচনা সমগ্র জুড়ে রয়েছে মানুষের জীবনের জটিলতা, সম্পর্কের গভীরতা, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজ সংস্কারের নীতির বিস্তারিত আলোচনা। লিও টলস্টয় লেখক পরিচিতি, লিও টলস্টয় এর বই, এবং লিও টলস্টয় এর উক্তি প্রমাণ করে যে তিনি কেবল একজন সাহিত্যিক ছিলেন না, বরং একজন চিন্তাবিদও ছিলেন। তাঁর লেখায় আমাদের জীবন এবং সমাজের সকল দিকের প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয়।
টলস্টয় কে ছিলেন এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, তিনি ছিলেন একজন বিশ্বখ্যাত লেখক, একজন দার্শনিক, একজন শান্তিবাদী এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য নিবেদিত এক মহান নেতা। তাঁর রচনার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়ন করা হয় এবং এটি সর্বদাই বিশ্ব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
লিও তলস্তয় জীবনী বাংলা এই ভাষায়ও প্রকাশিত হয়েছে, এবং তার সাহিত্য আজও মানুষের মধ্যে বিশাল প্রভাব বিস্তার করছে। লিও তলস্তয় জীবনী শুধু সাহিত্যিক বিষয় নয়, তার ব্যক্তিগত জীবন এবং দর্শনও শিক্ষার বড় অংশ।
লিও টলস্টয় শুধু একজন লেখক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, শান্তিবাদী, এবং নিরন্তর সমাজ সংস্কারক। তার “ওয়ার অ্যান্ড পিস”, “আনা কারেনিনা”, “রেসারেকশন”এবং অন্যান্য রচনাগুলি শুধু রাশিয়ান সাহিত্য নয়, বিশ্ব সাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় রচনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। টলস্টয় এর দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন এবং সাহিত্য আজও আমাদের জন্য এক অমূল্য রত্ন। তাঁর রচনায় মানবতা, শান্তি, সত্য, এবং ধর্মীয় দর্শনের চিরকালীন আবেদন প্রতিফলিজাতি