33.4 C
Dhaka
সোমবার, জুলাই ২১, ২০২৫

অভিযান চলবে গোপালগঞ্জে , গণগ্রেপ্তার বন্ধ চায় বিএনপি-এনসিপি

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
খবরের দেশ ডেস্ক :
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গোপালগঞ্জে জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে জারি করা কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের মিডিয়া সেল থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে, গোপালগঞ্জে গত বুধবারের এই সহিংসতার পর থেকে পুলিশ জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং গণগ্রেপ্তার বন্ধের দাবি জানিয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে একই দাবি জানিয়েছে কোটালীপাড়া শাখা এনসিপি।
অবশ্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না। তবে কোনো অবস্থাতেই যেন দুষ্কৃতকারী ছাড়া না পায় এবং নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা আরও বলেন, যারা অন্যায় করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, এদিন রাত ৮টার পর জেলায় ১৪৪ ধারা ও কারফিউ বলবৎ থাকবে না। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গত ১৬ জুলাই এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দিনভর হামলা-সহিংসতায় কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে। পরে ওইদিন রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এরপর কয়েক দফা কারফিউর সময় বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন গতকাল সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে।
কোটালীপাড়া বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: নাশকতা মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি ও এনসিপি। গত বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগদানে বাধা সৃষ্টির জন্য গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট সড়কের কোটালীপাড়া উপজেলার অবদারহাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া পুলিশ বাদী হয়ে ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১ হাজার ৫০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে গত শুক্রবার মামলা করে। ওই মামলায় নিরীহ মানুষকে গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল বিকেলে উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে কোটালীপাড়ার বিভিন্ন স্তরের জনতা, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, ভ্যানচালক, দিনমজুরকে ধরে নিয়ে এসে আসামি করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। আমরা এসব নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাচ্ছি। আর যদি একজন নিরীহ মানুষকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে আমরা উপজেলার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ জানাব।
এদিকে, শনিবার রাতে কোটালীপাড়া থানা চত্বরে গোপালগঞ্জ জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী রুম্মান হোসেন রিমন সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৬ জুলাইয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোটালীপাড়া থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। আমরা খতিয়ে দেখেছি, এই মামলায় আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এর মধ্যে অনেকেই নিরীহ। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত নয় এবং এই নাশকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিল না। আমরা নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানাই।
চার হত্যা মামলায় আসামি ৪৫০০: গত বুধবার সহিংসতার মধ্যে গুলিতে ঘটনাস্থলে দীপ্ত সাহা (২৫), সোহেল রানা মোল্লা (৩৫), রমজান কাজী (১৮) ও ইমন তালুকদার (১৮) নামে চারজন নিহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রমজান মুন্সী (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। এসব ঘটনায় এতদিন মামলা না হলেও শনিবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে ঘটনাস্থলে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক চারটি হত্যা মামলা করে। এ মামলায় মোট ৫ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন হত্যা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসব মামলার মধ্যে সোহেল হত্যা মামলার বাদী হয়েছেন এসআই আবুল কালাম আজাদ, দীপ্ত সাহা হত্যা মামলার বাদী এসআই শামীম হোসেনএবং ইমন হত্যা মামলার বাদী এসআই শেখ মিজানুর রহমান। এই তিন হত্যা মামলার প্রতিটিতে অজ্ঞাতপরিচয় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে, এসআই মো. আইয়ুব আলী বাদী হয়ে করা রমজান কাজী হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত ৯০০ জনকে। অবশ্য রমজান মুন্সীর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
ঘটনার চার দিনের মাথায় মামলা হলেও গতকাল পর্যন্ত নিহত পাঁচজনের মরদেহে ময়নাতদন্ত হয়নি। ঘটনার রাতে ও পরদিন তাদের দাফন ও সৎকার করেন স্বজনরা। মামলা হওয়ার পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হবে কি না—জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পর আইনগতভাবেই ময়নাতদন্তের বিষয়টি এগোবে।
ঘটনার চার দিনের মাথায় হত্যা মামলা হলেও এর আগে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে অভিযোগে মোট চারটি মামলা করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করে পুলিশ। চারটি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২ হাজার ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ৩২১ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্বজনরা জোর করে লাশ নিয়েছেন—দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের: এদিকে সংঘাতে নিহত চারজনের মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত না হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে। মরদেহ জোর করে স্বজনরা নিয়ে যান বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাসের স্বাক্ষর করা ব্যাখ্যাটি গতকাল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘বুধবার জেলায় অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্ত না করার বিষয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনদের বক্তব্য তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ময়নাতদন্ত না করে লাশ হস্তান্তর করে, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য।’
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রকৃত ঘটনা এই যে, ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর জরুরি বিভাগে প্রথম মৃতদেহটি আসে, কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর রোগীর স্বজনদের লাশ ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শেষ করে লাশ নেওয়ার কথা বললে স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে জোরপূর্বক লাশ নিয়ে যায়। পরে অন্য মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করাতে স্বজনরা রাজি হয় না এবং হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে জোরপূর্বক মৃতদেহ নিয়ে যায়।’
প্রশাসন চাইলে রক্তপাত এরানো যেত–শিক্ষক নেটওয়ার্ক: গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, প্রশাসন চাইলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষ ও রক্তপাত অবশ্যই এড়ানো যেত। একই সঙ্গে এই সহিংসতা দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে কি না, তদন্তে সেটি স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই প্ল্যাটফর্ম।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, যেকোনো বৈধ রাজনৈতিক দলের দেশের যেকোনো জেলায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। সরকারের দায়িত্ব কর্মসূচির নিরাপত্তা দেওয়া ও জননিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করা। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং প্রশাসন এনসিপির সমাবেশে নিরাপত্তা তো দেয়ইনি, বরং তাদের ভুল তথ্য দিয়ে আক্রমণের মুখে ফেলেছে।
এনসিপির কোনো কোনো নেতার ফেসবুক পোস্ট পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছিল অভিযোগ করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, এনসিপির চলমান ‘জুলাই পদযাত্রা’ কেন ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হয়ে গেল, সেটিও প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে।
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

অস্ট্রেলিয়ার নাটকীয় জয়

খেলাধুলা ডেস্ক : স্যাবাইনা পার্কে অভিষেকেই বাজিমাত করলেন মিচেল ওয়েন। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তিনি হয়ে উঠলেন ম্যাচের নায়ক। ক্যামেরন...