মোঃ হাদিসুর রহমান, সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রতিনিধি:
নারীর ওপর ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়—এ এক নির্মম সামাজিক বাস্তবতা, যা প্রতিদিন আমাদের বিবেকে আঘাত হানে। খবরের কাগজ খুললেই যেন চোখে পড়ে অন্ধকার। কখনও শিশুকে, কখনও স্কুলছাত্রীকে, আবার কখনও গৃহবধূকে—কারো না কারো আত্মচিৎকার চাপা পড়ে যায় সমাজের নিষ্ক্রিয় নীরবতায়।
বাংলাদেশে যৌন সহিংসতার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। নৃশংস এই অপরাধের বিপরীতে যেমন বিচারপ্রাপ্তির হার কম, তেমনি সামাজিক প্রতিরোধের বলয়ও যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। ধর্ষণের ঘটনা এখন সাইবার নিপীড়ন থেকে শুরু করে গ্যাংভিত্তিক সহিংসতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে।
এমন প্রেক্ষাপটে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন? কথা হয় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
ধর্ষণ শুধু একটি শব্দ নয়, এটি এক ভয়াবহ অভিশাপ— হাসান মাহমুদ, বাংলা বিভাগ
ধর্ষণ শুধু একটি শব্দ নয়, এটি এক ভয়াবহ অভিশাপ, এক নিঃশব্দ আর্তনাদ, যা প্রতিদিন সমাজকে কলঙ্কিত করছে। আইনের দুর্বলতা, বিচারহীনতা, সামাজিক অবক্ষয়—সব মিলিয়ে ধর্ষকরা আজ বেপরোয়া। ভুক্তভোগীরা চুপ থাকে, কারণ সমাজ তাদেরই দোষারোপ করে। আমরা যদি প্রতিবাদ না করি, তবে এই বর্বরতা একদিন আমাদের ঘরেও আঘাত হানবে। তাই আওয়াজ তুলুন, রুখে দাঁড়ান।
আইন আছে, প্রয়োগ নেই— হাফিজুর রহমান, ইসলামের ইতিহাস বিভাগ
নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে বড় বড় কথা বলা হলেও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নারীর জন্য নিরাপদ নয়। আইনি কাঠামো থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ নেই। পুলিশ স্টেশনে নারীকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর। শুধু পরিসংখ্যান নয়, বাস্তবতা পরিবর্তনে প্রয়োজন সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগ।
ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি— সীমান্ত বিশ্বাস, বাংলা বিভাগ
ধর্ষণ নিছক কোনো ঘটনা নয়, এটি সমাজের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। আইনের দুর্বলতা ও বিকৃত মানসিকতা এর মূল কারণ। প্রতিবাদ না করে চুপ থাকা মানেই অপরাধীদের উৎসাহ দেওয়া। ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন, সচেতনতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। আমাদের দায়িত্ব শুধু মোমবাতি প্রজ্বলন নয়, পরিবর্তনের পথে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া।
এই দেশ নারী-পুরুষ সকলের— সানজিদা আক্তার, বাংলা বিভাগ
“প্রতিদিন ফেসবুকে ধর্ষণের খবর দেখতে দেখতে যেন তা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা কাম্য ছিল না। ধর্ষণ রোধে ইসলামি আইনের আলোকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নারী কোনো ভোগ্যপণ্য নয়—তাকে সম্মান করতে শিখতে হবে। মাকে যেমন সম্মান করি, তেমনি রাস্তায় দেখা অচেনা নারীকেও সম্মান করতে হবে। নারী হিসেবে বেঁচে থাকতে চাইলে কেন বারবার আন্দোলন করতে হবে?”
ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক— মেহেদী হাসান পল্লব, ইংরেজি বিভাগ
দেশে ধর্ষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একে শুধুমাত্র ফাঁসি নয়, জনসমক্ষে পাথর নিক্ষেপের মতো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাই। সংবিধানের ধারা অনুসারে রাষ্ট্র চাইলে জরুরি অবস্থা জারি করে এই সামাজিক বিপর্যয় মোকাবেলা করতে পারে। ২৪-এর আন্দোলন নিয়ম মানেনি, আমরাও ন্যায়ের প্রশ্নে কোনো নিয়মের অপেক্ষা করব না।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তারা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ এবং প্রতিবাদী। তাদের চোখে ধর্ষণ শুধুমাত্র একটি আইনগত বিষয় নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ব্যাধি, একটি নৈতিক সংকট। শুধু আইন প্রণয়ন নয়, প্রয়োজন তার যথাযথ প্রয়োগ এবং সমাজের চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন।
সমাজকে রক্ষা করতে হলে, আজই রুখে দাঁড়াতে হবে। চুপ থাকা মানেই অপরাধীর পক্ষ নেওয়া। আওয়াজ তুলুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে।