34.3 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ২২, ২০২৫

যেভাবে পাইলট ‘ক্যাপ্টেন সালি’ সেদিন হাডসন নদীর বরফঠান্ডা জলে ১৫৫ জন যাত্রী নিয়ে নিরাপদে বিমান অবতরণ করেন

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
“হাডসনের মিরাকল” নামটা হয়তো অনেকেরই শুনে থাকবেন , এইটা এয়ার ক্র্যাস ইতিহাসের বিখ্যাত ঘটনা ।
২০০৯ সালে ১৫৫ জন যাত্রীবাহী একটি এয়ারবাস এ ৩২০ এর দুইটি ইঞ্জিন নিউ ইয়র্কের লা গারডিয়া এয়াপোর্ট থেকে উড্ডয়নের কিছু ক্ষণের মধ্যেই পাখির ঝাকের আঘাতে বিকল হয়ে যায়।
কিন্তু সেই বিকল হওয়া ইঞ্জিন সহ, ১৫৫ জন যাত্রি নিয়ে পাইলট ক্যাপ্টেন সালি সুলেনবার্গার (Sully), নিউইয়র্ক শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হাডসন নদীর বরফঠান্ডা জলে অবতরণ করেন। বিমানের প্রতিটি যাত্রী ও ক্রু বেঁচে যান। কেউ মারা যায়নি।দুইটি উদ্ধারকারী ফেরি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এসে যাত্রীদের উদ্ধার করে।৮–১০ বছর আগে এই ঘটনাটা আমাকে অসম্ভব টেনেছিল।
ভিডিও, ডকুমেন্টারি, রিপোর্ট—যা পেয়েছি সব দেখেছি।
পাইলট সালির একটা লেকচার শুনেছিলাম, যেটা এখনো মনে গেঁথে আছে।তিনি বলেছিলেন, “Miracle on the Hudson কোনো অলৌকিক ঘটনা ছিল না।”
তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন—
“ আমি আর কোপাইলট যেফ্রি স্কাইলসের ফ্লাইট রেকর্ডার পরবর্তীতে চেক করা হয় । আমরা দুই জন প্রায় কথাই বলি নাই। স্কাইলস জানতো আমার কি কাজ, আমি জানতাম স্কালির কি দায়িত্ব।
ইঞ্জিন লুজ করার পর বা পানিতে ল্যান্ডিনে এর বিষয়ে আমাদের চেকলিস্ট ছিল, আমরা দুই জনেই ঠিক সেই অনুযায়ী কাজ করেছি।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেয়—‘২০০ ডিগ্রি বাঁ দিকে ঘুরুন’, যেটা Laguardia-র ইমার্জেন্সি রুট।
যখন আমি বলি ‘Brace for impact’—তখন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা নিজেরাই পুরো ক্যাবিনকে প্রস্তুত করে ফেলে।
যখন বলি ‘Evacuate’—দরজা খোলে, রাফট বের করে।
তারা জানতও না যে আমরা নদীর ওপর, দরজা খুলে হাডসন দেখে কমান্ড পাল্টায়—‘লাইফ ভেস্ট পরুন, এইদিকে আসুন’।
ফেরি বোট চালকেরা যারা প্রতি মাসে ট্রেনিং নেয়, বছরে একবার সিমুলেটর দিয়ে রেসকিউ ড্রিল করে।
ফায়ারবোট, পুলিশ হেলিকপ্টার, এক ফ্রগম্যান (সে কোথা থেকে এলো জানি না, কিন্তু সে ছিল),
এবং এমনকি শহরের হাসপাতালগুলো—সবাই প্রস্তুত ছিল।
তারা অফ-ডিউটি ডাক্তার, নার্সদের পর্যন্ত ডেকে এনেছিল।
সালি আর আমি আমাদের কাজ করেছি, কিন্তু ডোনা, ডোরিন, শীলা (ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট), ১৫০ জন যাত্রী—সবাই তাদের কাজ নিখুঁতভাবে করেছে। কেউ হট্টগোল করেনি, সবাই একে অন্যকে সাহায্য করেছে।
উদ্ধারকারী বোটগুলো সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে,
জল ও স্থল উভয় জায়গার ফার্স্ট রেসপন্ডাররা সাড়া দিয়েছেন নিখুঁতভাবে।
হয়তো আপনি বলবেন এটা মিরাকল,
কিন্তু বাস্তবে এখানে এতগুলো মানুষকে তাদের কাজ নিখুঁতভাবে করতে হয়েছে যেন একটা ফলাফল পাওয়া যায়।
সেই নিখুঁত প্রস্তুতির ফলাফলই ছিল ‘মিরাকল’।”
এই মিরাকল ছিল ‘দশকের পর দশক ধরে চলে আসা প্রস্তুতির ফলাফল’।”
আর আজ, বাংলাদেশে আমরা দেখলাম মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
একটি ট্রেনিং জেট ভেঙে পড়ল স্কুলের ওপর। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের জীবন, ভবিষ্যৎ এক মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
কিন্তু তার পরে যা হলো, তা যেন “হাডসনের মিরাকল”–এর সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র।
উদ্ধার ব্যবস্থায় সমন্বয় নেই, জরুরি চিকিৎসা নেই, সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের মারধর করছে, ,দুর্ঘটনার সময় উদ্ধার না করে, ছবি তুলেছে অনেকে ,
সেনাবাহিনীর হাতে মৃতদেহ গুম করার গুজব এসেছে , আইসিইউ রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল দখলে রাজনৈতিক শো করেছে দেশের শীর্ষ নেতারা ।
দুর্ঘটনা যে কোনো দেশে ঘটতে পারে।
কয়েক দিন আগেই ভারতের বিমান একটি ক্যাফেটেরিয়ায় ভেঙে পড়েছিল।
কিন্তু আসল প্রশ্ন হল—দুর্ঘটনার পর সমাজ ও রাষ্ট্র কিভাবে রিএক্ট করে।
কোনো কোন দেশ প্রস্তুত থাকে, যাতে প্রাণহানি কমানো যায়, আর কোন কোন দেশে বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থা আর দায়িত্বহীনতার কারণে আরও বেশি ক্ষতি হয়।
পাইলট সালি বলেছিলেন—
“১৫৫ জন যাত্রী নিয়ে হাডসনে বিমান নামানোর পরেও কোন প্রান হানি না হওয়া কোনো অলৌকিকতা ছিল না।
এটা ছিল সিস্টেম, বছরের পর বছর ট্রেনিং, প্রস্তুতি আর দায়িত্বশীলতার ফলাফল।”
আর আমাদের আজকের বাস্তবতা—
একটি স্কুলের ছাদে বিমান পড়ার পর যা দেখেছি, সেটাই হয়েছে
বছরের পর বছরের প্রস্তুতিহীনতা, অব্যবস্থা আর অযোগ্যতার বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

আমি তো আছি, ভয় করিস না বোন আমার

খবরের দেশ ডেস্ক: বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা দেখে হতবাক হয়েছে সাড়া দেশ । মাইলস্টোন ভাই বোন দুজনেই  পড়ালেখা  করতেন।  বিমান হামলে...