Your Ads Here 100x100 |
---|
সম্প্রতি বাংলাদেশে দুটি আলোচিত ঘটনা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। প্রথমটি হলো একটি সরকারি অনুষ্ঠানে লাল গালিচা বিছিয়ে উপদেষ্টাদের স্বাগত জানানোর বিতর্ক এবং দ্বিতীয়টি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক। এই ঘটনাগুলো সমাজে ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’ পুনর্জাগরণের প্রশ্ন তুলেছে।
একটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের সময় তিনজন উপদেষ্টাকে লাল গালিচার উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। সমালোচকরা বলছেন, জনগণের করের অর্থে পরিচালিত একটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনে এ ধরনের আয়োজন অপ্রয়োজনীয় এবং জনসাধারণের প্রতি অবজ্ঞার প্রকাশ।
বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জনগণের সেবা করার জন্য নির্বাচিত বা মনোনীত ব্যক্তিদের সাধারণ মানুষের মতোই আচরণ করা উচিত। অন্যদিকে, সরকারপক্ষের অনেকে যুক্তি দেখাচ্ছেন যে এটি সম্মান প্রদর্শনের একটি অংশ মাত্র এবং এর পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই।
২০২৪ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার পর তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা রাজনৈতিক প্রভাবের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে, যা সাহিত্যিক মানদণ্ডকে ক্ষুণ্ন করেছে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ তালিকা স্থগিত রেখে পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নেয়।
সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা একে বাংলা অ্যাকাডেমির দীর্ঘদিনের গৌরবময় ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন। তারা দাবি করছেন, পুরস্কারপ্রাপ্তদের বাছাই প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং স্বাধীন হওয়া উচিত।
এই দুটি ঘটনা বাংলাদেশের ভিআইপি সংস্কৃতির এক নতুন মাত্রার ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণ নাগরিকদের সেবক, বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নন।
অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষকের মতে, এটি প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি ঐতিহ্য, যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার কথা নয়। তবে জনগণের প্রতিক্রিয়া দেখায় যে, রাষ্ট্রীয় সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অহংবোধের প্রকাশ সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় ভিআইপি সংস্কৃতির ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের উচিত জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং অহেতুক আড়ম্বর পরিহার করা। অন্যদিকে, সাহিত্য পুরস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা যেন রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে।