Your Ads Here 100x100 |
---|
অনলাইন ডেস্কঃ
ইসরায়েলি অবরোধে বিপর্যস্ত গাজা ক্রমেই এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে পড়ছে। একদিকে খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু; অন্যদিকে, অব্যাহত সামরিক হামলায় প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৭১ জন, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ত্রাণের আশায় অপেক্ষমাণ—এমনটাই জানাচ্ছে আল-জাজিরা।
রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে শুধু শনিবার পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত কারণে। এখন পর্যন্ত এই কারণে মোট মৃতের সংখ্যা ১২৭, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।
চিকিৎসাসংক্রান্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিহতদের একটি বড় অংশ ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। একদিনেই ৪২ জন বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই সহায়তা পাওয়ার আশায় জড়ো হয়েছিলেন বিভিন্ন স্থানে।
আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে ইসরায়েল শনিবার রাতে ঘোষণা করে, তারা বেসামরিক এলাকা এবং ত্রাণ পৌঁছানোর করিডোরে সাময়িক হামলা বন্ধ রাখবে। যদিও এই ঘোষণায় কোন এলাকাগুলোতে এই বিরতি কার্যকর হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ শিথিল করতে চাপ দিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি না দিয়ে বরং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ইসরায়েল। ইসরায়েল অবশ্য বারবার জাতিসংঘকেই দায়ী করেছে ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার জন্য।
ইসরায়েল এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত দাবি করছে, তারা আকাশপথে ত্রাণ পাঠাচ্ছে এবং পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর মতে, এই পদ্ধতি কার্যত অকার্যকর। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি একে “মূল সংকট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার এক ব্যয়বহুল উপায়” বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, রাস্তাগুলো খুলে না দিলে দুর্ভিক্ষ ঠেকানো সম্ভব নয়। আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা কোনো বাস্তব সমাধান নয়।
গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানান, বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। তাঁর ভাষায়, “এ পর্যন্ত যেটুকু ত্রাণ ফেলা হয়েছে, তা মাত্র সাতটি প্যালেট। একটি ট্রাকের চেয়েও কম। এভাবে ত্রাণ কার্যকরভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো অসম্ভব।”
তিনি আরও জানান, এসব ত্রাণ এমন এলাকায় ফেলা হচ্ছে যেগুলো ইসরায়েলের নির্ধারিত ‘সামরিক নিষিদ্ধ অঞ্চল’। ফলে রাতের বেলায় সেগুলো সংগ্রহ করাও দুঃসাধ্য।
এদিকে শনিবার গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায়, যা ইসরায়েলের ভাষায় ‘নিরাপদ এলাকা’, সেখানেও চালানো হয়েছে ড্রোন হামলা। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ছয়জন। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের ঘোষিত ‘সেফ জোন’ বাস্তবতায় কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের অভাবে তারা শিগগিরই জরুরি সেবা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করতে বাধ্য হবে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মহলকে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং দখলদার কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে অন্তত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম প্রবেশ করতে পারে।
চিকিৎসা সূত্রগুলো সতর্ক করে বলছে, গাজায় গণহারে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর আশঙ্কা এখন কেবল অনুমান নয়, বরং বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংঘর্ষের পাশাপাশি অনাহারে মৃত্যু যেন দ্বিতীয় এক যুদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে।