28.8 C
Dhaka
শনিবার, আগস্ট ২, ২০২৫

হারিয়ে গেছে ৬০% জলাধার তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

খবরের দেশ ডেস্কঃ

গত চার দশকে ঢাকা শহরের পরিবেশগত ভারসাম্য চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। ১৯৮০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বেড়েছে সাত গুণ। ভূমির তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হারিয়ে গেছে ঢাকার ৬০ শতাংশ জলাধার। অবশিষ্ট জলাধার রয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এলাকায়। ২১ দশমিক ৬ শতাংশ ঢাকার সবুজ আচ্ছাদন কমতে কমতে নেমেছে মাত্র ১১ দশমিক ৬ শতাংশে।

রাজধানী ঢাকা নিয়ে এমন শঙ্কার তথ্য উঠে এসেছে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ প্রকাশিত এক গবেষণায়। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রকৃতিবিহীন ঢাকা? প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক টেকসই নগর ভাবনার পুনর্বিচার’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গত ৪৪ বছরের স্যাটেলাইট চিত্র ও নগর তাপমাত্রা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই গবেষণায় ঢাকার পরিবেশগত অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে অব্যবস্থাপনা আর অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণই এই সংকটের মূল কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান এবং সহায়তা করেছেন সাবরিন সুলতানা ও মো. ফুয়াদ হাসান।

গবেষণায় দেখা গেছে, এটি শুধু নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা নয়, এক ধরনের পরিবেশগত অবিচার এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। নগর নয়, এবার প্রকৃতির অধিকার নিশ্চিত করাই হোক ঢাকার টেকসই ভবিষ্যতের মূল ভিত্তি; বলছে সংস্থাটি।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা ঢাকাকে সাত গুণ নগর বিস্তার, ৬০ শতাংশ জলাধার হারানো ও ৫ ডিগ্রি উত্তাপ ঠেকাতে প্রয়োজন প্রকৃতির অধিকার ও প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকার অর্ধেক গাছ বিলুপ্ত হয়েছে। সবুজ আচ্ছাদন কমে এসেছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে মাত্র ১১ দশমিক ৬ শতাংশে। বৃক্ষশূন্য অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আদাবর, রামপুরা, কাফরুল, বংশাল ও ওয়ারী; যেখানে গাছ প্রায় নেই বললেই চলে। ৪৪ বছরে ঢাকার ৬০ শতাংশ জলাধার বিলুপ্ত হয়ে এখন মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এলাকায়। প্রায় পানিশূন্য এলাকা সূত্রাপুর, মিরপুর, গেণ্ডারিয়া ও কাফরুল। ৫০টির মধ্যে কেবল ছয়টি থানা ন্যূনতম জলাধারের মান পূরণ করতে পারছে।

নগরীর তাপমাত্রা বিষয়ে বলা হয়, ঢাকা শহরের ভূতাপমাত্রা বেড়েছে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে ঢাকার কোনো এলাকা ৩০ ডিগ্রি সেলিসিয়াস তাপমাত্রার নিচে নেই। ঢাকার গরমের হটস্পট শ্যামপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা ও দারুস সালাম। এসব এলাকায় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা। আগে ঠান্ডা থাকা এলাকাগুলোর অবস্থাও এখন বিপজ্জনক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বেড়েছে সাত গুণ, যা এখন শহরের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে নিয়েছে। ৯০ শতাংশ বা তার বেশি কংক্রিটে আচ্ছাদিত বংশাল, সূত্রাপুর, কলাবাগান, হাজারীবাগ, মিরপুর ও রামপুরা। ৫০টি থানার মধ্যে ৩৭টি ইতোমধ্যে নিরাপদ নির্মাণ সীমা অতিক্রম করেছে। ওয়ারী, বংশাল, কোতোয়ালিসহ ঘনবসতিপূর্ণ কেন্দ্রীয় এলাকাগুলো প্রায় সম্পূর্ণ প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন।

পরিবেশ বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকাকে বাঁচাতে দরকার জরুরি প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পুনর্গঠন। যদি ঢাকা শহরে প্রত্যেক বাসিন্দার জন্য অন্তত ৯ বর্গমিটার গাছপালা ও ৪ দশমিক ৫ বর্গমিটার জলাধার সংরক্ষণ করা যায়, তবে শহরের গড় ভূমি তাপমাত্রা প্রায় ১ দশমিক ০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানো সম্ভব।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকায় ২ দশমিক ৫ কোটি মানুষের বসবাস হবে। তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে এবং ঢাকার প্রকৃতি ধ্বংসের মুখোমুখি। সিঙ্গাপুর ও সিউলের মতো নগরীগুলো গাছপালার পরিমাণ ৩০-৪৭ শতাংশ বজায় রেখেছে। এমনকি দিল্লি ও জাকার্তাও ঢাকার চেয়ে এগিয়ে। শুধু করাচি ঢাকার নিচে, আমরাও সে পথেই এগিয়ে চলেছি। ঢাকাকে রক্ষা করতে হলে সিঙ্গাপুরের মতো প্রকৃতিভিত্তিক মডেল গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, এ গবেষণা প্রতিবেদনটি ঢাকা সংকটকে শুধু পরিবেশগত অবক্ষয় নয়, বরং প্রকৃতির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের একটি রূপ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির বেঁচে থাকা অপরিহার্য। কোনো শহর তার নিজের ফুসফুসকে রুদ্ধ করে বিকশিত হতে পারে না। শুধু বাসস্থানের কারণে কাউকে ক্রমবর্ধমান উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাব ভোগ করা উচিত নয়।

সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ রক্ষায় স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রাসহ ১৫টি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রকৃতির অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জলাভূমি ও বনভূমি ভরাটকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন প্রণয়ন করা। পরিবেশগত বাফার জোন এবং সংকটপূর্ণ এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংস্কার করা। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর গোষ্ঠীগত তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা। সবুজ অঞ্চলের জন্য জোনিং, পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাধ্যতামূলক এবং জলাশয় পুনরুদ্ধার করা। প্রকৃতিবান্ধব কাঠামোর তুলনায় কংক্রিটের কাঠামোর ওপর পাঁচ গুণ কর আরোপ করা।

মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপে বলা হয়, ঢাকার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান গ্রহণ করা। সবুজ বিনিয়োগের জন্য নিম্ন আয়ের এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। প্রকৃতিবঞ্চিত অঞ্চলে ৫৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার বৃক্ষরোপণ করা। তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে জলাভূমি পুনরুদ্ধার করা। পরিবেশগত বাফার জোন এবং গোষ্ঠীগত পানি তত্ত্বাবধান পুনঃপ্রবর্তন করা। তাপ ঝুঁকিপূর্ণ এবং পানি সংকটপূর্ণ থানাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া। সব অংশীজনের জন্য ডিজিটাল প্রাকৃতিক জবাবদিহি নিশ্চিত করা। টেকসই ও প্রকৃতি অর্থায়ন প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের দিকে পরিচালিত করা।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

কি ইট লাগাইছে, শহিদদের কবরের ওপর এভাবে দুর্নীতি করছেন?

খবরের দেশ ডেস্ক : কি ইট লাগাইছে, শহিদদের কবরের ওপর এভাবে দুর্নীতি করছেন?  জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ রায়েরবাজার গণকবরের লাশগুলো ডিএনএ টেস্টের...