26.5 C
Dhaka
সোমবার, জুলাই ২৮, ২০২৫

গার্ডিয়ানের এক্সপ্লেইনার–যে ৫ কারণে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক চুক্তি এখনো নড়বড়ে

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
অনলাইন ডেস্কঃ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন রোববার একটি বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এটি এখনো অনেকটা রাজনৈতিক পর্যায়ের ঘোষণা মাত্র। এর বাস্তবায়ন ও সুনির্দিষ্ট শর্তগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত রূপ কেমন হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ‘আংশিক’ চুক্তি ভবিষ্যতে দুই রকম ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি করে। এতে ট্রাম্প বা ইউরোপ উভয় পক্ষই প্রয়োজনে শর্ত পাল্টাতে পারে।

চুক্তির ঘোষণা অনুযায়ী, ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া অধিকাংশ পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো গেল।

ইইউ তিন বছরের মধ্যে ৭৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৫৬০ বিলিয়ন পাউন্ড) মূল্যের তেল, গ্যাস, পারমাণবিক জ্বালানি ও সেমিকন্ডাক্টর কেনার চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। একই সময়ে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪৪৬ বিলিয়ন পাউন্ড) বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সরঞ্জাম কেনাকাটাও অন্তর্ভুক্ত বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান টিডি সিকিউরিটিজের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আর্থিক হার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রশান্ত নিউনাহার মতে, এই চুক্তি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি ‘বড় জয়’। ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম বাধ্যতামূলকভাবে কেনা এবং ইউরোপের কোনো পাল্টা শুল্ক না দেওয়াটা কোনো দরকষাকষি নয়। এটা ‘দ্য আর্ট অব দ্য ডিল’।

থেকে যাওয়া কিছু অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্র স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখবে। যদিও উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে এই শুল্ককে একটি কোটা ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হতে পারে। ফার্মাসিউটিক্যালস (ওষুধ শিল্প) নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প প্রথমে বলেন, এই খাত শুল্কের আওতায় আসবে না, কিন্তু পরে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, এটিও ১৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়েছে।

ফন ডেয়ার লাইয়েনের উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, শূন্য শুল্ক (জিরো ট্যারিফ) প্রযোজ্য হবে কিছু নির্দিষ্ট খাতে। এর মধ্যে আছে, সব ধরনের উড়োজাহাজ ও এর যন্ত্রাংশ, নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পদার্থ, কিছু জেনেরিক ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর সরঞ্জাম, কিছু কৃষি পণ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। তবে ইউরোপীয় ওয়াইন ও মদ উৎপাদকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কী হারে শুল্ক ধার্য হবে, তা পরিষ্কার হয়নি।

ট্রাম্প শর্ত বদলাতে পারেন

বৈশ্বিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান টেনিও’র গবেষণা বিভাগের উপপরিচালক কারস্টেন নিকেল বলেন, এই চুক্তি শুধু একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সমঝোতা। এটি বিস্তারিত বা একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির বিকল্প হতে পারে না। এটি ভবিষ্যতে বিভিন্ন ব্যাখ্যার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির পর যেমনটা দেখা গেছে।

রোববার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি বিনিয়োগ সংক্রান্ত অঙ্গীকার রক্ষা না করে, তাহলে ট্রাম্প ভবিষ্যতে শুল্ক আরও বাড়ানোর ক্ষমতা রাখেন।

আয়ারল্যান্ডে বিভাজন

এই চুক্তি আয়ারল্যান্ড দ্বীপে একটি বিভাজন তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্য পৃথক চুক্তি করেছে। এ কারণে যুক্তরাজ্যের অংশ হিসেবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা ১০ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন। কিন্তু স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের জন্য সেই হার হবে ১৫। এই বৈষম্য দ্বীপজুড়ে স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রতিশ্রুতির কূটনৈতিক আলাপকে কঠিন করে তুলতে পারে।

জার্মানির শিল্পখাতে হতাশা

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ এটি একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য সংঘাত এড়াতে সাহায্য করেছে, যা জার্মানির রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি ও বড় অটোমোবাইল খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারত। জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো— ফক্সওয়াগন, মার্সিডিজ ও বিএমডব্লিউ এর আগে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ মার্কিন শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে জার্মানির প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীর ফেডারেশনের (বিডিআই) নেতৃবৃন্দের একজন ওল্ফগ্যাং নিডারমার্ক বলেছেন, ১৫ শতাংশ শুল্কও রপ্তানি নির্ভর জার্মান শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর দেশটির কেমিকেল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এই শুল্ক হারও অতিরিক্ত।

শুল্ক এখনো অনেক বেশি

উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এই চুক্তিকে ‘ভালো’ বলেছেন। কিন্তু ইউরোপীয় কমিশনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি ‘জিরো-ফর-জিরো’ চুক্তি। কিন্তু বাস্তবে শুল্কহার অনেক বেশি রয়ে গেছে। জার্মানির বেনারবার্গ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হোলগার শ্মিডিং বলেন, চুক্তিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য সহনীয়। কিন্তু এটি ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর আগের পরিস্থিতির তুলনায় অনেক বেশি খারাপ পরিণতি।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামে সড়কে পানি, দুর্ভোগ কর্মস্থলগামী লোকজনের

খবরের দেশ ডেস্কঃ ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরের কিছু কিছু এলাকায় পানি জমেছে। রোববার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়, এরপর থেমে...