Your Ads Here 100x100 |
---|
কক্সবাজার প্রতিনিধি :
সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে ৬ মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এই কর্মসূচির আওতায় আগষ্ট ২০২৫ থেকে ফেব্রুয়ারী ২০২৬ এর মধ্যে থাকবে-
*৫০ টি ইভেন্টের মাধ্যমে ১০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হবে
*স্থানীয় ১০ হাজার প্রান্তিক পরিবারকে প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাদ্যসহায়তা দেয়া হবে
*৩ টি স্টোরের মাধ্যমে ১ লক্ষ পর্যটককে প্লাস্টিক প্রতিরোধে সরাসরি সম্পৃক্ত করা হবে
*এবং সমুদ্র সৈকতে প্রদর্শনী সহ বিভিন্ন সচেতনতা কাযক্রমের মাধ্যমে ১০ লক্ষ পর্যটক কে প্লাস্টিক দূষণের ব্যাপারে সচেতন করা হবে
আজ সকাল ১০ টায় সুগন্ধা পয়েন্ট সমুদ্র সৈকতে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো: শাহিদুল আলম, বিচ ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো: আজিম খান, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো: জামাল উদ্দিন প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন-
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো: জামাল উদ্দিন বলেন ” একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অস্তিত্বের হুমকি হচ্ছে প্লাস্টিক। যে কোনো সমস্যা সমাধানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নদীমাতৃক এই দেশের প্রাণপ্রবাহ বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন প্রাণীকুলকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এই পৃথিবীকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখতে হলে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই”
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয় “প্লাস্টিক দূষণ একটি ব্যাপক পরিবেশগত সমস্যা, যা বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্র, মানব স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশে এ চ্যালেঞ্জটি বর্তমানে পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে, যা শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক চাপের সম্মুখীন। দেশে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নদী, খাল এবং বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে।
থ্রি আর কৌশল তথা রিডিউস, রিইউজ ও রিসাইকেল বা ব্যবহার হ্রাস, বারবার ব্যবহার ও নতুন করে অন্য কিছু তৈরি করার কৌশল অবলম্বন করে প্লাস্টিকের চক্রাকার ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করা সম্ভব। সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অসংখ্য তৃণমূল আন্দোলন এবং সামাজিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং সুশীল সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প প্রচারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
এই বাস্তবতায় আজ থেকে ৬ মাসের জন্য জেলা প্রশাসন কক্সবাজার ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন চালু করেছে “প্লাস্টিক বিনিময় স্টোর” যেখানে পযটকরা ব্যবহৃত প্লাস্টিক জমা দিলেই পাবেন উপহার এবং প্রান্তিক মানুষ কুড়ানো বা জমানো প্লাস্টিক জমা দিলে পাবেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী।
উদ্বোধনের প্রথম দিনে সুগন্ধা পয়েন্টে ১ টি “প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর” স্থাপন করা হয়েছে যেখানে পর্যটকরা তাঁদের ব্যবহৃত সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বোতল জমা দিলেই পাচ্ছেন নিশ্চিত উপহার!
পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য বসানো হয়েছে “প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার” যেখান থেকে ৫০০ স্থানীয় দুস্থ পরিবার প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার করতে পেরেছেন।
উদ্বোধনের প্রথম দিনেই প্রায় ২ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে। আয়োজকরা আশা করছেন এবছরে এই কার্যক্রম থেকে ১০০ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
সংগৃহীত প্লাস্টিক সমূহ ১০০% রিসাইকেল করার জন্য দেশের স্বনামধন্য রিসাইকেল কোম্পানির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। সংগৃহীত প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে নির্মাণ করা হবে “প্লাস্টিকের ভাস্কর্য”।
সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বিশাল একটি সুপারশপ বসেছে নানা রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা নিয়ে। মানুষ প্লাস্টিকের বিনিময়ে এসব কিনতে পারছেন। বাজারে ১ কেজি প্লাস্টিকের দাম ২০-৩০ টাকা হলেও এই বাজারে সেটির প্রায় ৫০_৮০ টাকা মুল্য দেয়া হচ্ছে। ১ কেজি প্লাস্টিক দিয়ে ১.৫ কেজি চাল যেমন পাওয়া যাচ্ছে তেমনি ৬ টি ডিম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১ কেজি প্লাস্টিকে! প্রায় ১৮ রকমের পণ্য থেকে নিজেরাই বাছাই করে কেনার স্বাধীনতা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
অপরদিকে “প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোরে” সিংগেল ইউজ প্লাস্টিকের বোতল জমা দিয়ে পযটকরা বিভিন্ন উপহার জিতে নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য ; বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন যৌথভাবে ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে।