27.7 C
Dhaka
সোমবার, আগস্ট ৪, ২০২৫

এবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ খুঁজছে কমিশন

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
খবরের দেশ ডেস্কঃ

বিএনপি মতামত দিলেও জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এর খসড়ায় মতামত দেয়নি জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত ১৩টি দল। সনদের আইনি ভিত্তি চাওয়া এ দলগুলোর দাবি– নির্বাচনের আগেই সাংবিধানিক সংস্কার হতে হবে, ভোট হবে সনদের অধীনে। এই বাস্তবতায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ খুঁজছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

গতকাল রোববার সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। আলী রীয়াজ সমকালকে বলেন, কমিশনের বৈঠকের বিষয়ে সরকারপ্রধানকে অবহিত করা হয়েছে।

কমিশনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সনদ স্বাক্ষরের কাজ শেষ করা। পরে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৫ আগস্ট। কিন্তু এখনও খসড়া চূড়ান্ত না হওয়ায় কমিশনের মেয়াদের মধ্যে সনদ হবে কিনা– এমন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ১৫ আগস্ট কমিশনের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হবে।
মনির হায়দার সমকালকে বলেন, সব দলের মতামত পাওয়ার পর সনদের খসড়া করা হবে। এরপর বাস্তবায়নে পথ নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর সনদ চূড়ান্ত হবে। আশা করা যাচ্ছে, কমিশনের মেয়াদের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেছেন, সনদে মতামত দিতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করছেন তারা। এর জন্য আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়– এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত কমিশনকে জানাবে জামায়াত। তিনি বলেন, সনদ নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন হতে হবে। পরবর্তী সংসদ সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারকে অনুমোদন করবে। এর জন্য কী কী কাজ করতে হবে তা জামায়াতের মতামতে থাকবে। সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় যদি বাস্তবায়নের পথ না থাকে তবে সই করা হবে না।

গত শনিবার এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দাবি করেন, জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচনে হতে হবে। একই  অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে সংলাপে দলের প্রতিনিধিত্ব করা এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন সমকালকে বলেছেন, সংস্কার বাস্তবায়নে কমিশনের প্রস্তাব ছিল গণভোট, গণপরিষদ, পরবর্তী সংসদসহ ছয়টি উপায়।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত দেওয়ার কথা কীভাবে সংস্কার হবে। কিন্তু কমিশন একটি দলের প্রতি ঝুঁকে পরবর্তী সংসদে সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে, যা অগ্রহণযোগ্য। তবে এনসিপি কয়েকদিনের মধ্যে সনদের বিষয়ে মতামত দেবে। এনসিপির প্রধান দাবি গণপরিষদ। তবে মতামতে বলা থাকবে, কীভাবে নির্বাচনের আগে সংস্কার এবং সনদের অধীনে ভোট করা যায়।

চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও সনদের আইনি ভিত্তি চায়। দলটির মহাসচিব ইউনূস আহমদ সমকালকে বলেছেন, মুখের কথার অঙ্গীকার অতীতে রক্ষিত হয়নি। ইসলামী আন্দোলন আগে থেকেই বলে আসছে, নির্বাচনের আগে সংস্কার হতে হবে। তাই পিআরসহ মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সনদের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নয়তো সনদে সই করা হবে না।

বিএনপি ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছে বলে শনিবার সমকালকে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপিকে যখনই আলোচনায় আমন্ত্রণ করা হয়েছে, গিয়েছে। আবারও আলোচনা করলে বিএনপি যাবে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, সনদের বিষয়ে বিএনপিসহ ১৬-১৭ দলের মতামত পাওয়া গেছে। বাকিদের মতামত পাওয়ার পর কমিশন সনদের খসড়া চূড়ান্ত করবে। এরপর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও মত-দ্বিমত
শুধু সনদ নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মত-দ্বিমত চলছে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবসে গণঅভ্যুত্থানের শরিক রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোকে পাশে নিয়ে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবেন ড. ইউনূস। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বিকেল ৫টায় ঘোষণাপত্র পাঠ উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ পুরো এলাকায় সাজ সাজ রব চলেছে। ঢাকার বাইরে থেকে ছাত্র-জনতার যাতায়াতে আটটি ট্রেন ভাড়া করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ঘোষণাপত্র প্রকাশ উপলক্ষে বিপুল আয়োজন থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও মত-দ্বিমত চলছে। গতকাল গণঅধিকার পরিষদ জানিয়েছে, খসড়া নিয়ে আলোচনা না করায় ঘোষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে তারা যাবে না।

গত ১৪ জানুয়ারি সরকার ঘোষণাপত্রের প্রথম খসড়া করে। তখন এর ওপর ৩২টি দলের মতামত গ্রহণ করা হয়। এরপর ঘোষণাপত্রের আলোচনা চাপা পড়ে। জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গত ৮ মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে আবার ঘোষণাপত্রের প্রসঙ্গ সামনে আনা হয়। ১০ মে রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে প্রকাশ করবে সরকার।

এই সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ১ জুলাই। গত ১৩ জুলাই বিএনপি এবং এনসিপিকে ঘোষণাপত্রের খসড়া পাঠায় সরকার। পরে জামায়াতসহ কয়েকটি দলকেও খসড়া পাঠানো হয়। দলগুলোর মতামত অন্তর্ভুক্ত করে ২৭ জুলাই চূড়ান্ত খসড়া পাঠানো হয় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে। এ দলগুলোর মতামত নিয়ে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করেছে সরকার। তবে এতে কী কী থাকছে, তা প্রকাশ করেনি সরকার। ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত রূপ রাজনৈতিক দলগুলোকেও দেখানো হয়নি।

এ অবস্থায় ঘোষণাপত্র পাঠের সময় সব দল প্রধান উপদেষ্টার পাশে থাকবে কিনা, এ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, ঘোষণাপত্রে তাদের মতামতের প্রতিফলন না থাকলে বিএনপি অনুষ্ঠানে যোগ দেবে কিনা– বিবেচনা করে দেখা হবে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেন, জনগণের মতামতের প্রতিফলন থাকতে হবে ঘোষণাপত্রে। জামায়াত মতামত দিয়েছে, প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে।

এনসিপিও ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় চায়। বিএনপি ঘোষণাপত্রের সারাংশ সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে যুক্ত করতে চায়।

সনদ নিয়ে টানাপোড়েন
গত ৩১ জুলাই ৩০ দল ও জোটের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষ করে ঐকমত্য কমিশন। এর আগে গত ২৮ জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয় দলগুলোকে। দলগুলোর সঙ্গে ২ জুন থেকে ২৩ দিন সংলাপ করে কমিশন। সনদের প্রাথমিক খসড়ায় শুধু পটভূমি এবং সাত দফা অঙ্গীকার রয়েছে। বিস্তারিত সনদে বলা থাকবে কোন কোন সংস্কার কীভাবে হবে।

খসড়ায় সাত দফা অঙ্গীকার রয়েছে। সনদের দ্বিতীয় দফায় সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংস্কারে যেসব সুপারিশে দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এর জন্য সংবিধানে প্রয়োজনী সংশোধন, পরিমার্জন, পুনর্লিখন এবং আইন, বিধিবিধানেও অনুরূপ পরিবর্তন করা হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে গঠিত সরকার তা দুই বছরের মধ্যে করবে। বিএনপি এতে একমত হলেও বিরোধী জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল রাজি হয়নি। তাদের দাবি, সনদ বাস্তবায়নে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে, না হলে তারা তাতে সই করবে না।

ঐকমত্যের সংলাপে কমিশন ২০টি সংস্কারের সিদ্ধান্ত দিলেও আটটিতে ঐকমত্য হয়নি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। বিএনপি চারটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাজি নয়। তিনটিতে নোট অব ডিসেন্টসহ (আপত্তি) একমত হয়েছে। জামায়াত একটি সিদ্ধান্তে রাজি নয়। দলগুলো জানিয়েছে, যেসব সিদ্ধান্তে তারা রাজি নয়, ক্ষমতায় গেলে সেগুলো বাস্তবায়ন করবে না।

ভোটের অনুপাতে (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, প্রধামন্ত্রীর একাধিক পদ না থাকা; দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগে সাংবিধানিক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে বিএনপি রাজি হয়নি। দলটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে সংসদীয় বাছাই কমিটি গঠনে একমত হলেও র‌্যাংক চয়েজ ভোটের সিদ্ধান্তেও রাজি নয়।

জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল বলছে, এসব সিদ্ধান্তে ঐকমত্য না হলে সনদ অর্থহীন। সনদ বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলে তা শুধু দলিল হয়ে থাকবে।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

“মেয়েকে নিয়ে বাণিজ্য চলবে না: পরীমণি”

বিনোদন ডেস্কঃ গেল বছর একটি কন্যাশিশু দত্তক নিয়েচেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। মায়ের আদর দিয়েই তাকে বড় করে তুলছেন তিনি। এক ছেলে ও...