Your Ads Here 100x100 |
---|
ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির একাংশ। ভাঙচুর আপাতত বন্ধ থাকলেও চলছে লুটপাট। এর মধ্যে বাড়িতে থাকা বই, লোহা, ইট, ভাঙা গ্রিল, কাঠ সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র- যে যার মতো পারছে- নিয়ে যাচ্ছে।
ভারতে পালাতক শেখ হাসিনা সরকারের উৎখাতের ছয় মাস পূর্তির দিন গত বুধবার রাতে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে এই ভাঙচুর শুরু হয়।
সকাল থেকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত কয়েকটি গ্রুপ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িটির সামনে জড়ো হয়। সেখানে মাইক নিয়ে অবস্থান নেয় একটি দল।
মাইকে তাদেরকে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘বত্রিশ না ছত্রিশ, ছত্রিশ ছত্রিশ’; ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’; ‘দালালি না আজাদি, আজাদি আজাদি’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’; ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
রাতে একটি ক্রেন ও দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে ওই বাড়ি ভাঙা শুরু হলেও সকালে দেখা যায় শুধু একটি এক্সক্যাভেটর। যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে সকাল সাড়ে ১০টায় সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে ভাঙা দুই ভবন এবং পেছনের বর্ধিত জাদুঘর ভবন থেকে রড কেটে নিতে দেখা গেছে নিন্ম আয়ের মানুষদের। হাঁতুড়ি, শাবল, লোহা কাটার ব্লেড দিয়ে যে যার মতো কেটে সরিয়ে নিচ্ছে।
হাতে মাথায় বয়ে এনে সড়কে স্তূপ করে সেখান থেকে রিকশা বা ভ্যানে করে সেসব কাটা রড, গ্রিল ও কাঠ সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
হাজারীবাগের বাসিন্দা সিরাজুল নামে একজন ভ্যানে করে এমন নানান জিনিসপত্র বোঝাই করছিলেন। এগুলো কী করবেন, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভাঙারির দোকানে নিয়া বেঁচমু। সবাই নিতেছে, আমিও নিলাম যা পাইছি আইসা।”
আধভাঙা ভবনের রড কাটছিলেন সুজন নামে একজন। তিনি জানান, “ভাইঙাইতো ফেলতেছে, আমরা কিছু নিয়া যাই। যা পাই, তাই লাভ।”
দুপুর গড়ালেও পেছনের ওই ছয়তলা বর্ধিত জাদুঘরের ভবনটিতে শত শত মানুষ ঢুকছে, আর বের হচ্ছে। ভবনটিতে থাকা শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত বিভিন্ন বই হাতে হাতে নিয়ে যাচ্ছেন উৎসুক জনতা।
সামনের আধাভাঙা ভবন দুটিতেও উৎসুক জনতার ঢল নামে। কেউ কেউ ছবি তুলছেন-ভিডিও করছেন, আবার থেকে থেকে বিভিন্ন স্লোগান দিতেও দেখা গেছে।
এদিকে জিহাদুল ইসলাম নামক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “কই গেল আওয়ামীলীগের ক্ষমতার দম্ভ? কই গেল স্বজন হারানোর এতো বেদনা? এই বাড়ির সামনে দিয়ে দিনের বেলাও সাধারণ মানুস হেঁটে যেতে পারতো না। আজ সেই জনতা এসে বাড়ি ভেঙে দিচ্ছে, যে যার মতো ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে। দাম্ভিক স্বৈরাচারের এ পরিণতি দেখে আশা করি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষা নেবে।”
একই সাথে সুধা সদনেও হামলা
পালাতক শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দেওয়া ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি কেবল সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুন দেয়া হয় ধানমন্ডি ৫ এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে।
বুধবার রাতে দেওয়া আগুন বৃহস্পতিবার সকালেও কোথাও কোথাও জ্বলতে দেখা গেছে। দুপুরে বাড়িটির ভেতরে প্রচণ্ড তাপের মধ্যেই সেখান থেকে যে যার মতো বৈদ্ধতিক তার, রড, সোফা, চেয়ার, টেবিলসহ আধপোড়া বিভিন্ন আসবাব, এসি, ফ্রিজ সহ বিভিন্ন আসবাব-পত্রের ভাঙা অংশ সরিয়ে নিয়েছে বিক্ষুদ্ধ জনতা।
সুধাসদনের বিপরিত পাশের অ্যাপার্টমেন্টের এক বাসিন্দা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। ২০০৮ এর নির্বাচন তিনি এখানে থেকেই করেছিলেন। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে থেকেছেন।
এই বাড়িতে কিছুদিন আওয়ামী লীগের কিছু অফিসও ছিল। পরে সেটি তালা মারাই থাকত।
আওয়ামী লীগ সন্দেহে দুইজনকে গণপিটুনি
বাড়ি ভাঙার মধ্যেই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উৎসুক জনতার ভিড়ে আওয়ামী লীগ সন্দেহে এক নারীসহ দুইজনকে গণপিটুনি দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় এক নারীর উপর হামলা করা হয়ে। অন্যদিকে কথোপকথনের সময় ‘আপার বাড়ি’ শব্দটি ব্যবহার করার দায়ে এক পুরুষকে গণপিটুনি দিয়ে তাড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।
একপর্যায়ে তাদের মারতে মারতে ধানমন্ডি-৩২ থেকে প্রধান সড়কে নিয়ে যায় তারা। পরে এক ফটোসাংবাদিকসহ কয়েকজন তাদের রিকশায় তুলে দেন।
এসময় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।