28.8 C
Dhaka
মঙ্গলবার, আগস্ট ১২, ২০২৫

সাইয়ারা’ দেখে কেন হাজারো তরুণ-তরুণী কান্নাকাটি করছেন ?

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
খবরের দেশ ডেস্ক :
মুক্তির দিন থেকেই বক্স অফিসে হিট। ভারতে প্রেমের গল্পের সিনেমা ‘সাইয়ারা’ দেখে অনেক তরুণ-তরুণীর কান্নাকাটির দৃশ্যও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। প্রেক্ষাগৃহে কেউ কেউ বুক চাপড়েও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন। কিন্তু বলিউডে শত শত প্রেমকেন্দ্রিক সিনেমার ভিড়ে ‘সাইয়ারা’ কেন এত আলোড়ন তুলল? বিশেষ করে জেন-জি দর্শকের মাঝে। আর গল্পেই বা ভিন্নতা কী আছে?
মোহিত সুরি পরিচালিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন নবাগত আহান পাণ্ডে ও আনিত পাড্ডা। মুক্তি পায় গত ১৮ জুলাই। প্রথম দিন থেকেই সাইয়ারা দর্শকদের নজর কাড়ে। হৃদয়ছোঁয়া গান, আবেগঘন মুহূর্ত ও আহান-আনিত জুটির রসায়নে ভরপুর এই সিনেমা বিশাল সংখ্যক দর্শককে হলে টেনেছে। মুক্তির ২১তম দিন পর্যন্ত সিনেমাটি ভারতে আয় করেছে প্রায় ৩০৬ কোটি রুপি। বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ইতোমধ্যে ৫০০ কোটি রুপির মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
কী আছে গল্পে
আপনি মুহিত সুরির আশিকি-২ দেখে থাকলে সাইয়ারাকে সেটির তৃতীয় সংস্করণ বলা যায়। ব্যাখ্যার প্রয়োজনে লেখার এই অংশে কাহিনীর বর্ণনা থাকবে। সুতরাং স্পয়লার না পেতে চাইলে লেখার এই অংশ এড়িয়ে যেতে পারেন।
কৃষ কাপুর (আহান পাণ্ডে) একজন প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী, যার লক্ষ্য বড় মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরা। অন্যদিকে বাণী বত্রা (আনিত পাড্ডা) আগে কবি ছিলেন, পরে সাংবাদিকতা শুরু করেন। আর কাজের সূত্রেই তার পরিচয় হয় কৃষের সঙ্গে।
কৃষ এক সময় বাণীর কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন। পরে বাণীকে তাঁর গানের কথা (গীত) লেখার জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তারা একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করলে, ধীরে ধীরে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বলা চলে প্রেমের অতিমানবীয় ক্ষমতা তাদের নিজ নিজ প্রতিভা বিকাশে বেশ প্রভাব ফেলে।
প্রেমের সিনেমার গল্পে বেশিক্ষণ সুখের মুহুর্ত ধরে রাখলে কোনো আকর্ষণ তৈরি হয় না। গল্প ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়। এ কারণেই বেশিরভাগ পরিচালক ‘টুইস্ট’ আনার চেষ্টা করেন। তবে তা চিত্রনাট্যকারের কল্পনা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে সাইয়ারায় মোহিত সুরি কি কোনো চমক দিতে পেরেছেন?
এক কথায় বললে- না। আট-দশটা গল্পের মতোই তিনি প্রেমে মোড় এনেছেন। কৃষের সঙ্গে ভালো মুহুর্ত কাটাতে কাটাতেই এক সময় বাণী আলঝেইমারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হন। যা ধীরে ধীরে তাঁর মস্তিষ্ক থেকে অনেক স্মৃতি মুঝে দেয়। প্রথমে বাণী তাঁর অসুস্থতা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটে যে, এক সময় কৃষকে প্রাক্তন প্রেমিক ভাবতে শুরু করেন। এরই এক পর্যায়ে বাণী ‘সাইয়ারা’ নামে একটি গান লিখে ফেলেন। যেখানে গানের প্রতিটি কথায় তাঁর সমস্ত ভালোবাসা আর যন্ত্রণাকে ঢেলে দেন। সিনেমার পরের বেশ খানিকটা অংশে আর তাঁকে দেখা যায় না।
এদিকে বাণীর লেখা গান প্রায় প্রতিটি কনসার্টে গাইতে শুরু করেন কৃষ। এক পর্যায়ে গানটি শ্রোতাদের মধ্যে চিরন্তন ভালোবাসার প্রতীক হয়ে ওঠে। কৃষ আশায় থাকেন তাঁর গাওয়া গান কোনো না কোনো সময় বাণীর কাছে পৌঁছাবে। যখন কৃষ বাণীকে খুঁজে পান, তখন একটি চিঠিও দেখেন। যেখানে লেখা থাকে, ‘আমার না থাকা, তোমার বড় হয়ে ওঠার কারণ হবে।’
ক্লাইম্যাক্সে এসে এমন সংলাপের মিল পাওয়া যায় আশিকি-২ এর সঙ্গে। মোহিত সুরি বিচ্ছেদ বেদনা দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু পুরোপুরি পারেননি। সাইয়ারার কিছু অংশে তৈরি হওয়া অনুভূতি রণবীর কাপুরের ‘রকস্টার (২০১১)’, ধানুশের রানঝানা (২০১৩), তৃপ্তি দিমড়ির ‘লায়লা-মজনু (২০১৮)’ তেও পাওয়া যায়। সম্প্রতি পিঙ্কভিলা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহিত সুরিও বলেছেন, এই গল্প দিয়ে তিনি সাইয়ারা নয়, আশিকি-৩ বানাতে চেয়েছিলেন।
জেন-জি কেন এত আবেগী
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দর্শক প্রতিক্রিয়া হিসেবে যাদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে তাদের বেশিরভাগই জেনারেশন-জেড এর তরুণ-তরুণী। বাণিজ্য বিবেচনায় সাইয়ারার সফলতা এখানেই। প্রায় একই সময়ে মুক্তি পেয়েছে অ্যাকশন, থ্রিলার ধাঁচের ‘সন অব সরদার-২’ ও ‘ধড়ক-২’। কিন্তু সাইয়ারা নিয়ে জেন-জি’দের উন্মাদনার মাঝে এ দুটি সিনেমাই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
একটি প্রজন্ম, যারা নিজেরাই কনটেন্ট ক্রিয়েটর তাদের সিনেমা হলে নিতে পারাটা সাইয়ারার সফলতাই বটে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, এটি কেবল প্রচার বা ‘হাইপ’ এর কারণে নয়, সিনেমার আবেগী প্রেমের গল্পটাও জেন-জি’দের আকৃষ্ট করেছে।
কিন্তু বিষয়টা কি এতটাই সরল? সিনেমা মুক্তির সময় অনেক অর্থ ঢেলে প্রচার চালানো এখনকার দিনে সাধারণ ঘটনা। কিন্তু সাইয়ারার ক্ষেত্রে প্রচার বেশি দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে। সিনেমার অংশ বিশেষের বদলে দর্শক প্রতিক্রিয়াই বেশি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও টিকটকে। যা জেন-জি’দের ‘ট্রিগার’ করার জন্য যথেষ্ট বলেই মত দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
সিনেমা দেখে মানুষ কেন কাঁদে
ভালো সিনেমা খুব যত্নসহকারে তৈরি করা হয়, যাতে তা দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখে এবং গভীরভাবে আবেগে ডুবিয়ে দেয়। এই সিনেমাগুলো দর্শককে চরিত্রের খুব কাছাকাছি জগতে নিয়ে যায়, যেখানে তারা কেন্দ্রীয় বা পার্শ্ব অভিনেতা-অভিনেত্রীর জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে। কিছু বাস্তব ঘটনার সিনেমা স্বাভাবিকভাবেই দর্শককে আবেগী করে। আবার কিছু সিনেমা বানানোই হয় আবেগী গল্পকে কেন্দ্র করে।
আকর্ষণীয় গল্পের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন স্নায়ুবিজ্ঞানী পল জ্যাক। যা প্রকাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন-এর ওয়েবসাইটে। পল দেখিয়েছেন, এ ধরনের গল্প দেখলে মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয়। অক্সিটোসিন সবচেয়ে বেশি পরিচিত সন্তান জন্মদান ও স্তন্যদান প্রক্রিয়ায় ভূমিকার জন্য। এটি সন্তান প্রসবের সময় জরায়ুর সংকোচন বাড়ায় ও মাতৃদুধ নির্গমনের জন্য দুধনালিকে উদ্দীপিত করে।
এছাড়াও, এই হরমোন নিঃসৃত হয় ইতিবাচক শারীরিক সংস্পর্শে—যেমন জড়িয়ে ধরা, চুমু, যৌন ঘনিষ্ঠতা কিংবা প্রাণীকে আদর করলে। এমনকি আনন্দদায়ক সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমেও অক্সিটোসিন নিঃসরণ হয়। এ কারণে একে বলা হয় ‘ভালোবাসার হরমোন’।
মানুষ যেহেতু টিকে থাকার জন্য সামাজিক বন্ধনের ওপর নির্ভরশীল তাই বন্ধন সম্পর্কিত কোনো কিছুর সাদৃশ্য পেলে সে আবেগী হয়ে ওঠে। এটি শুধু সিনেমা নয়, বাস্তবের কোনো ঘটনাও তাকে আবেগী করে তোলে।
সিনেমা দেখে কান্নাকাটি করার অর্থ হলো, আপনি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা আপনার অক্সিটোসিন হরমোনকে সক্রিয় করেছে।
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

আজিয়াটাকে বাংলাদেশে ৫জি সেবা চালু করতে এবং ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

খবরের দেশ ডেস্ক : মালয়েশিয়ার শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কম্পানি আজিয়াটাকে বাংলাদেশে ৫জি সেবা চালু করতে এবং ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান...