30 C
Dhaka
রবিবার, আগস্ট ১০, ২০২৫

১ লাখ ২০ হাজারের বেশি চেক প্রত্যাখ্যান মামলা ঝুলে আছে ঢাকায়

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
খবরের দেশ ডেস্ক :
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মহানগর দায়রা আদালতে নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্ট, ১৮৮১ (চেক প্রত্যাখ্যান) মামলার বিচার হয় আটটি যুগ্ম আদালতে। এসব আদালতে বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন। প্রতিটি আদালতে ১৫ থেকে ১৭ হাজার মামলা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি মামলার নথি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি এসব আদালতকে অন্যান্য মামলার শুনানিও পরিচালনা করতে হয়।
গত ৭ বছর ধরে দেড় লাখ টাকার চেক প্রত্যাখ্যান (চেক ডিসঅনার) মামলায় আদালতের এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দায় ঘুরছেন মো. রায়হান নোমান। প্রতিটি ধার্য তারিখে আদালতে এসে খালি হাতে ফিরতে হয় তাকে। অপেক্ষা করতে হয় নতুন তারিখের জন্য। দীর্ঘ সময়েও বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি।
রায়হান নোমান টিবিএসকে বলেন, “২০১৮ সালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করি। ভেবেছিলাম বিবাদীর কাছ থেকে দ্রুতই পাওনা টাকা ফেরত পাব। কিন্তু তা হয়নি, বরং সময় ও টাকা—দুটোই নষ্ট হচ্ছে। তারিখের পর তারিখই পাচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, মামলার প্রথম দুই বছর নষ্ট হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। এরপর বিচারিক আদালতে বদলির প্রক্রিয়ায় কেটেছে আরও এক বছর। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
কিন্তু এখানে বছরে মাত্র একবার শুনানির তারিখ পাওয়া যায়। “সেই তারিখেও কখনো আসামি অসুস্থ, কখনো বিচারক ছুটিতে—বিভিন্ন কারণে শুনানি হয় না। ৭ বছরে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করতে পারিনি। আরও কত সময় লাগবে জানি না, ধৈর্যও ফুরিয়ে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো ন্যায়বিচারের আশা ছেড়ে দিতে হবে,” বলেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মহানগর দায়রা আদালতে নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্ট, ১৮৮১ (চেক প্রত্যাখ্যান) মামলার বিচার হয় আটটি যুগ্ম আদালতে। এসব আদালতে বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন। প্রতিটি আদালতে ১৫ থেকে ১৭ হাজার মামলা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি মামলার নথি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি এসব আদালতকে অন্যান্য মামলার শুনানিও পরিচালনা করতে হয়।
সূত্র জানায়, ঢাকার ১ম যুগ্ম আদালতে ১৬ হাজার ৬৯০টি, ২য় যুগ্ম আদালতে ১৪ হাজার ৮৬৬টি, ৩য় যুগ্ম আদালতে ১৭ হাজার ২৬৯টি, ৪র্থ যুগ্ম আদালতে ১৩ হাজার ৮৪৪টি, ৫ম যুগ্ম আদালতে ১৬ হাজার ০৯৩টি, ৬ষ্ঠ যুগ্ম আদালতে ১৭ হাজার ২০৬টি, ৭ম যুগ্ম আদালতে ১৪ হাজার ৮৮৯টি এবং পরিবেশ আদালতে প্রায় ১০ হাজারের বেশি চেক ডিসঅনার মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এসব মামলা ধাপে ধাপে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই শুধু ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ১২ হাজার নতুন মামলা এসেছে বিচারের জন্য।
তবে প্রতি বছর নতুন মামলা আসার সংখ্যা নিষ্পত্তিকৃত মামলার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় মামলার জট ক্রমেই বাড়ছে।
পাঁচ লাখ টাকার চেক প্রত্যাখ্যানের আরেক মামলায় গত ৯ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন বাদী ফারহান হোসেন। তিনি টিবিএসকে জানান, ব্যবসার জন্য এক নিকট আত্মীয়ের কাছে পাঁচ লাখ টাকা ধার দেন। কিন্তু তিনি টাকা পরিশোধ না করে নানা অজুহাতে সময় নষ্ট করতে থাকেন। পরে এক আইনজীবীর পরামর্শে আদালতে মামলা করেন।
ফারহান বলেন, “এখানেও কোনো লাভ হচ্ছে না, বরং বাড়তি সময় ও টাকা অপচয় হচ্ছে। আদালতে এসে একের পর এক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। যখনই মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির পর্যায়ে আসে, তখনই আসামিপক্ষ নতুন কোনো কারণ দেখিয়ে সময় নিচ্ছেন।”
তিনি আরও জানান, “প্রতিটি আদালতে এনআই অ্যাক্ট সংক্রান্ত মামলার চাপ বেশি থাকায় বিচারকরা হিমশিম খাচ্ছেন। বছরে একবারের বেশি শুনানির তারিখ মেলে না। ফলে ১০টি শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ১০ বছর। আদালতে মেনশন করে বহুবার আইনজীবীর মাধ্যমে দ্রুত শুনানির তারিখ চাইলেও তা মেলেনি।”
তার অভিযোগ, এভাবে বিচার প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ন্যায়বিচারের চেয়ে হয়রানিই বেশি হবে।
মামলার চাপ সামলাতে হিমশিম
ঢাকার ৭ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে জানান, এ কোর্টে চেকসংক্রান্ত মামলার সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এর মধ্যে ১৫ বছর আগের মামলাও রয়েছে।
“মামলার সংখ্যা বেশি হওয়ায় বছরে একটি শুনানির তারিখ পাওয়াই কঠিন। গড়ে ১০ থেকে ১১ মাস পর একটি মামলার তারিখ আসে। আদালতের সংখ্যা কম ও পর্যাপ্ত কর্মচারী না থাকায় মামলার নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগছে,” বলেন তিনি।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) রেহানা পারভীন জানান, “২০০৫ সালের আগে চেকসংক্রান্ত মামলার বিচার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হতো। ২০২০ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এসব মামলা যুগ্ম জেলা ও দায়রা আদালতে পাঠানো হয়। এরপর থেকে মামলার সংখ্যা বাড়লেও আদালতের সংখ্যা বাড়েনি। ফলে বিপুল মামলা জমে আছে।”
“অনিচ্ছাকৃত হলেও বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফলে আদালতের সংখ্যা ও কর্মচারী বাড়ানো দরকার,” যোগ করেন তিনি।
ঢাকার ৫ম যুগ্ম মহানগর দায়রা আদালতের এপিপি মো. সাচ্চু মিয়া বলেন, “মামলার সংখ্যা বেশি ও আদালতের স্বল্পতার কারণে জট তৈরি হচ্ছে।”
ভবিষ্যতে যুগ্ম আদালতের সংখ্যা না বাড়লে এই জট আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে সরকারের উদ্যোগ কামনা করেন।
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

জয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ

খবরের দেশ ডেস্ক : বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই দুর্দান্ত পাঁচ উইকেট শিকার এবং কুশল মেন্ডিসের তাণ্ডব ও...