অবশেষে সেই দিন এলো! ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণার আসরেই শাহরুখ খান পেলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা জাতীয় পুরস্কার তাঁর ব্লকবাস্টার ‘জাওয়ান’-এ করা ক্ষমতাবান অভিনয়ের জন্য। ৩৩ বছরের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারে এটাই তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার! অনেকেই ভাবেছিলেন এই স্বীকৃতি অনেক আগেই আসা উচিত ছিল, কিন্তু আজকে ঐ দীর্ঘ অপেক্ষার দিনটা শেষ হয়ে গেল। খবর শুনেই গোটা দেশ জুড়ে ভক্তদের উল্লাস শুরু কারণ কিং খান আর তাঁর দাওড়ানো ভক্তশ্রেণী এ মুহূর্তটাকে জীবনের সেরা স্মৃতি বলে ধরে নিয়েছে।
১৯৯২ সালে ‘দেওয়ানা’ দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখার পর থেকে শাহরুখ খান বলিউডের কিংবদন্তি হয়ে গেছেন। তিনি প্রেমের ছবিতে সিনেমা হল মাতিয়েছেন ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’, ‘স্বদেশ’-এর মতো ছবিতে, দেশের গ্রামের প্রতি অতল ভালোবাসা আর দেশভক্তি মিশিয়ে গান গেয়েছেন।
‘চক দে! ইন্ডিয়া’-তে কোচ কাবির খান হয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে উল্লাস উপহার দিয়েছেন, ‘মাই নেম ইজ খান’-এ রিজওয়ান খান হয়ে আমেরিকায় নিপীড়িত মুসলিমের ভালোবাসা বোঝিয়েছেন। জনতার কাছে এসব অভিনয় অনবদ্য হলেও জাতীয় পুরস্কারের পরপরই তেমন স্বীকৃতি পাচ্ছিলেন না তিনি। যেমনি ২০০৪ সালে ‘স্বদেশ’-এর মহনকে ভালোবেসেও সেরার পুরস্কার নেয় ‘হাম টাম’-এর সাইফ আলি খান; ২০০৭ সালে ‘চক দে’-র জনপ্রিয় সাফল্য ছাপিয়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হলেন অন্য ছবি ‘ধুম ২’র হৃত্বিক রোশন; ২০১০ সালে ‘মাই নেম ইজ খান’-এর স্বীকৃতিকে পেয়ে গেলেও ভারতের জাতীয় পুরস্কার গিয়েছিল ‘পা’ ছবির অমিতাভ বচ্চনের দিকে। এই দীর্ঘ পথচলায় দর্শকের মনে ধারণ করা ‘সেরা অভিনয়গুলো’ নিছক দর্শকসীমায় আটকে থাকাটা কষ্টের ছিল, তাই আজকের এই জয় যেন তার দীর্ঘ লড়াইয়ের সার্থক ফল।
তার এই পুরস্কার শুধু ‘জাওয়ান’র জন্য নয়, বরং সারাজীবন দিয়ে আসা অবদানের স্বীকৃতি। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, সরকার যেন ৩৩ বছরের পুরো অবদানকে সম্মান জানিয়েছে এই পুরস্কারের মাধ্যমে। শোরগোল শুরু হয়, এই কি জাওয়ানের জন্য আনুষ্ঠানিক পুরস্কার, নাকি বহু প্রতিক্ষিত স্বীকৃতি? তা আসলে বোঝাতে আজকের দিন। অভিনব এই জাতীয় পুরস্কারকে যেন বললো সরকারের পক্ষ থেকে ‘ধন্যবাদ’ বলার মতো একটি টোকেন হিসাবে। সিনেমার প্রতি তার অবদানের তোড়-জোড় অব্যাহত থাকতে পারতো না তাই আজ পুরস্কারটা বরং তার চিরস্মরণীয় অবদানের একটি উপহার ছিল।
ফেসবুক-টুইট-ইনস্টা সবখানে তখন জোর আলোড়ন। ভক্তরা লম্বা লম্বা লাইন লিখেছেন: “৩৩ বছরের পর রয়্যাল রাজপুত্র পেলেন রাজকীয় সম্মান, অবশেষে পাওয়াটা হলো তার প্রাপ্য!”, “উনি যতোদিনে পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন, সেটা সবাই অনুভব করেছিলো”. কেউ লিখেছেন, “The King of Cinema finally got his crown!” আরেকজন শিরোনাম সেজে লিখেছেন, “HISTORY MADE! ৩৩ বছরের পরিশ্রম আর অনন্য দক্ষতার পুরস্কার পেলেন কিং খান”। অনেকে বিশেষ উদাহরণ টেনেছেন: “স্বদেশ, চকদে, বীরজারা তে অভিনয়ের জন্য তাকে পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল অনেক আগেই”, “Shah Rukh Khan deserves it long back!”। পরিচিত তারকারাও আনন্দ জানান; ফারাহ খান ইনস্টাগ্রামে বসে লিখলেন, ‘অভিনন্দন SRK এবার সত্যিই কঠোর প্রচেষ্টা সফল হলো’। সামাজিক জগতে সবই ছিল অনন্য উচ্ছ্বাস আর জয়ধ্বনি।
এই অর্জন হাজারো ভালোবাসা আর আশা দেখানো মানুষের জন্য এক প্রত্যাশার বার্তা হয়ে গেল। শাহরুখ খান শুধু সিনেমার নায়ক নন, তিনি অনেকের জীবনের অংশ, তাঁদের ‘কিং খান’ যিনি লড়াইয়ের রূপক। তার সাফল্য বার্তা দিল, সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি আর কঠোর পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। যে স্বপ্ন দেখার সাহসী ছিল, আজ তার স্বপ্ন পুরস্কৃত হল। তিনি প্রমাণ করলেন বোধের আলো যদি ছড়িয়ে দাও, পথ যতই কঠিন হোক না কেন, শেষে বিজয় তোমারই হবে!