Your Ads Here 100x100 |
---|
অপ্রত্যাশিত এক পদক্ষেপে, নাসার ব্যবস্থাপনা তাদের কর্মীদের জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ডোজকয়েন (DOGE) থেকে ‘অনুপ্রেরণা’ নিতে উৎসাহিত করেছে, যা কর্মীদের মধ্যে কৌতূহল এবং উদ্বেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এই নির্দেশনা শুক্রবার কর্মীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক অভ্যন্তরীণ ইমেইলে জানানো হয়, যার লক্ষ্য ছিল সংস্থার মধ্যে উদ্ভাবন এবং মনোবল বাড়ানো।
ইমেইলে, নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক ডোজকয়েনের হাস্যরসাত্মক ইন্টারনেট মিম থেকে একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ডিজিটাল সম্পদে রূপান্তরের যাত্রাকে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং দ্রুত বৃদ্ধির উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, DOGE-এর উত্থান প্রমাণ করে যে অপ্রচলিত ধারণাও বিশাল সাফল্য এনে দিতে পারে যদি তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়। নাসার প্রধান উদ্ভাবন কর্মকর্তা ড. লিন্ডা গ্রেভস বলেন, “DOGE একটি মজা হিসেবে শুরু হয়েছিল কিন্তু এটি একটি কমিউনিটি-চালিত সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আমরা চাই আমাদের দলগুলো সাহসী ধারণা গ্রহণ করুক, এমনকি সেগুলো প্রথমে অসম্ভব বলে মনে হলেও।”
তবে, এই বার্তা সর্বত্র ইতিবাচকভাবে গৃহীত হয়নি। কিছু কর্মী নাসার বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার সাথে একটি মিম-ভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সিকে তুলনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক অনামী কর্মী মন্তব্য করেন, “সৃজনশীলতা উৎসাহিত করার ধারণা অবশ্যই ভালো, তবে ডোজকয়েনের মতো কিছুর সাথে আমাদের অনুপ্রেরণার তুলনা করা কঠোর বৈজ্ঞানিক নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।” তিনি আরও যোগ করেন যে, নাসার গবেষণা এবং প্রকল্পগুলো গভীর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও নির্ভুলতার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়, যা একটি মিম-ভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে তুলনায় ভিন্ন।
নাসা স্পষ্ট করেছে যে DOGE-এর উদাহরণটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা ঝুঁকি নেওয়া এবং প্রচলিত চিন্তার বাইরে ভাবনাকে উৎসাহিত করার জন্য, ক্রিপ্টোকারেন্সি মডেলের আক্ষরিক গ্রহণের জন্য নয়। নাসার মুখপাত্র মার্ক ডেলানি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করা যেখানে সবচেয়ে অপ্রচলিত ধারণাগুলিও অনুসন্ধান করা হয়।” তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, উদ্ভাবনী চিন্তাধারার জন্য প্রেরণা নেওয়া মানে শুধুমাত্র নতুন প্রযুক্তি বা ধারণা গ্রহণ করা নয়, বরং সেগুলিকে একটি বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করা।
এটি এমন একটি সময়ে এসেছে যখন নাসা বাজেটের সীমাবদ্ধতা এবং স্পেসএক্স এবং ব্লু অরিজিনের মতো বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলির প্রতিযোগিতামূলক অগ্রগতির মধ্যে উদ্ভাবনের জন্য চাপের মুখোমুখি। বেসরকারি খাতে দ্রুত অগ্রগতি নাসার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে যাতে তারা তাদের প্রকল্প এবং গবেষণাকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারে। সংস্থাটি আশা করে যে এমন মোটিভেশনাল কৌশলগুলো তাদের কর্মশক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করবে এবং যুগান্তকারী প্রকল্পের জন্য অনুপ্রাণিত করবে।
কর্মীদের মধ্যে এই নির্দেশনার প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। কিছু কর্মী এটিকে উদ্ভাবনী ধারণার জন্য ইতিবাচক একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, যেখানে অপ্রচলিত চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে, কিছু কর্মী মনে করছেন যে এই ধরনের উদাহরণ নাসার বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তবে, এই উদ্যোগ নাসার মধ্যে প্রাণবন্ত আলোচনার সূত্রপাত করেছে, যেখানে কিছু কর্মী অভ্যন্তরীণ ফোরাম তৈরি করেছেন “বক্সের বাইরে” সাহসী ধারণা বিনিময়ের জন্য। এই ফোরামগুলোতে কর্মীরা তাদের উদ্ভাবনী ধারণা শেয়ার করছেন এবং পরস্পরের চিন্তাভাবনাকে সমৃদ্ধ করছেন।
যদিও ডোজকয়েনের উদাহরণটি নাসার বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলের জন্য অদ্ভুত মনে হতে পারে, তবে এর মূল লক্ষ্য হল কর্মীদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় উদ্বুদ্ধ করা। নাসার ইতিহাসে অনেক বড় উদ্ভাবন এসেছে সেই সব ধারণা থেকে যা শুরুতে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে নাসা তাদের কর্মীদের মনে করিয়ে দিতে চায় যে, সত্যিকারের অগ্রগতি আসে তখনই যখন আমরা প্রচলিত সীমারেখা অতিক্রম করে নতুন কিছু ভাবার সাহস করি।
(সূত্র: সিএনএন)