26.3 C
Dhaka
বুধবার, আগস্ট ১৩, ২০২৫

বাবা যে আর কখনও ফিরে আসবে না, সেটা বুঝে গেছে আলিফ

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
খবরের দেশ ডেস্ক :
নূর আলিফের বয়স পাঁচ বছর। তার বাবা যে আর কখনও ফিরে আসবে না, সেটা ভালোভাবেই বুঝতে শিখেছে। এরপরও মাঝেমধ্যেই মায়ের কাছে বাবার কথা জিজ্ঞাস করে। সন্তানের প্রশ্ন শুনে নির্বাক হয়ে যান মা সুমি আক্তার। কী উত্তর দেবেন ছেলের প্রশ্নে! তিনি হারিয়েছেন স্বামী আর দুই শিশু সন্তান হারিয়েছে বাবা। সন্তানদের আড়ালে গুমরে কাঁদেন তিনি। নিজের শতকষ্ট বুঝতে দেন না সন্তানদের।
সুমি আক্তার সমকালকে বলেন, এত বছর একসঙ্গে ছিলাম। আর এখন মানুষটা নেই। অনেক দূরে চলে গেছে। এখন ভাবী, ভাগ্যে হয়তো এটাই ছিল। ভাগ্যকে মেনে নিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে চলছি।
তিনি জানান, মাঝেমধ্যে ছোট ছেলে নূর আলিফকে নিয়ে বাড্ডার পাঁচতলা এলাকার কবরস্থানে স্বামীর কবর দেখতে যান। কবর দেখিয়ে আলিফ মাকে বলে, আব্বু এখানে শুয়ে আছে। আর কখনও বাসায় যাবে না। তাদের সঙ্গে দেখা হবে না। প্রায় দিনই মায়ের মোবাইল ফোনে বাবার ছবি দেখে শিশুটি।
সম্প্রতি বাড্ডার আফতাবনগর সংলগ্ন দক্ষিণ আনন্দনগরে আল আমিনের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নূর আলিফ বালিশের ওপর মোবাইল ফোন রেখে সমবয়সী চাচাত ভাইকে বাবার ছবি দেখাচ্ছে। বাবার ছবি থেকে আলিফের চোখ যেন সরছে না।
আল আমিন এয়ারকন্ডিশন ও ফ্রিজ মেরামতের কাজ করতেন। দুই ছেলে আলিফ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. সিয়াম এবং স্ত্রী নিয়ে ছিল তার সংসার। দক্ষিণ আনন্দনগরের একই বাড়িতে তার আরও দুই ভাই ও বাবা থাকেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে আল-আমিন মেজো।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাড্ডার আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন আল আমিন। রাতে পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি। গভীর রাতে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন স্বজনরা। তার মৃত্যুর ঘটনায় আপনজনদের না জানিয়েই দুই ব্যক্তি রাজধানীর ভাটারা ও হাতিরঝিল থানায় দুটি হত্যা মামলা করেন।
প্রথমে মামলার বিষয়ে নিহত আল আমিনের বাবা, ভাই কিংবা স্ত্রী কেউই জানতেন না। মামলার পর পুলিশি তদন্ত শুরু হলে তারা বিষয়টি জানতে পারেন। এমনকি মুগদা জেনারেল হাসপাতাল থেকে আল আমিনের ডেথ সার্টিফিকেটও (মৃত্যুসনদ) পরিবারকে না জানিয়ে সংগ্রহ করেন হাতিরঝিল থানার মামলার বাদী মো. মোজারুল। সেই ডেথ সার্টিফিকেটের আসল কপি আজও পায়নি আল আমিনের পরিবার।
আল আমিনের স্বজনরা জানান, কয়েকবার তারা মোজারুলের কাছে ডেথ সার্টিফিকেটের কপি নিতে গিয়েছিলেন। একটি ফটোকপি হাতে ধরিয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, আসল কপি পরে দেবেন। আল আমিন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে মেরুল বাড্ডার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে। এটি বাড্ডা থানার আওতাধীন। অথচ দুজন বাদী হয়ে ঘটনাস্থল পৃথক দেখিয়ে ভাটারা ও হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন।
দুটি মামলায় তারা ৩৮২ জনকে আসামি করেছেন। এমনকি আন্দোলনের সময় একবারের জন্যও ঢাকায় আসেননি এমন ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যা ঘটনাস্থল দেখিয়ে এই মামলা করেছেন বলে অভিযোগ স্বজনদের।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থল বাড্ডা থানার মধ্যে, আমি শুনেছি বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা হবে। আগের দুই মামলার বিষয় কী হবে সেটি আদালত সিদ্ধান্ত দেবে।
জানা যায়, মামলা দুটির তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারকে বাদী হয়ে নতুন করে বাড্ডা থানায় মামলা করতে বলেছে। কিন্তু পরিবার মামলা করতে রাজি হচ্ছে না।
নিহতের স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, ‘আমি দুই ছোট সন্তান নিয়ে থাকি। মামলা করলে এখন না হয় সমস্যা হবে না। কিন্তু পরবর্তীতে সমস্যা হলে আমাদের পাশে কে থাকবে? কে আমাদের নিরাপত্তা দেবে? এলাকার আওয়ামী লীগের লোকজন তখন আমাদের ছেড়ে দেবে? এই ভয়ে আমরা বাদী হয়ে মামলা করতে চাইছি না।’
আল আমিনের বড় ভাই মো. পারভেজ বলেন, এই সরকার তো সব সময় থাকবে না। পরবর্তী সময়ে যখন আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, তখন তো আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারে।
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

গাজায় ক্ষুধার্ত শিশুদের কাছে যান , পোপ লিওকে জানালেন ম্যাডোনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ লিওকে গাজা সফরের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সংগীত শিল্পী ম্যাডোনা। ফিলিস্তিনের ক্ষুধার্ত শিশুদের সাহায্যে...