27 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

একা শিক্ষিকার কাঁধে পুরো স্কুলের ভার

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

 

ফেনীর দাগনভূঞার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম চুন্দারপুর। সবুজে ঘেরা সেই গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত চুন্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একসময় যেখানে কোলাহলে মুখরিত ছিল ছয়জন শিক্ষক আর শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান, আজ সেখানে সব দায়িত্ব যেন কাঁধে তুলে নিয়েছেন মাত্র এক শিক্ষিকা—রহিমা বেগম রেনু।

বিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষকের মধ্যে দুজন বদলি হয়েছেন, একজন প্রশিক্ষণে গেছেন, আরেকজন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, এবং সবচেয়ে দুঃখজনক—প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান মারা গেছেন। এখন পুরো স্কুলের দায়িত্ব যেন রহিমা বেগমের একার হাতে!

একটি স্কুল, একজন শিক্ষিকা, শত শিক্ষার্থী

সকালে বিদ্যালয়ের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় প্রাণোচ্ছল শিশুদের মুখ। কিন্তু ক্লাসরুমগুলো যেন নীরব আর অপেক্ষারত—শিক্ষকের অভাবে তারা যেন একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছে শেখার আনন্দ।

অফিস কক্ষে পাওয়া গেল রহিমা বেগম রেনুকে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা এই শিক্ষিকা জানালেন, কীভাবে শিক্ষক সংকটের সঙ্গে লড়াই করে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর চেষ্টা করছেন। “আগে আমরা ছয়জন ছিলাম, এখন একা আমি। ভাগ্য ভালো, কিছুদিন আগে তাহামিনা সুলতানা মিলিকে ডেপুটেশনে আনা হয়েছে। নইলে কী হতো, জানি না!”

শিক্ষক না থাকায় একসঙ্গে তিনটি শ্রেণিকে একত্রে পড়াতে হয়। সকালবেলা প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিকে এক ক্লাসে বসিয়ে পড়ানো হয়, আর বাকি সময় ভাগ করে অন্যদের পাঠদান চলে।

বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল অভিভাবক বিলকিস আক্তারের সঙ্গে। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, “আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। শিক্ষক না থাকায় আমি টেনশনে আছি। এভাবে চলতে থাকলে অন্য কোথাও ভর্তি করিয়ে দেবো।”

স্থানীয় আরেক অভিভাবক, মো. নুরুল আফছার হতাশ গলায় বললেন, “আমার ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। শিক্ষক না থাকায় অনেকে বাচ্চাদের অন্য স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমিও ভাবছি ছেলেকে স্থানান্তর করব।”

উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানালেন, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে একজন শিক্ষিকা থাকলেও ডেপুটেশনে আরেকজন পাঠানো হয়েছে। “আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করবো,” বললেন তিনি।

দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স.ম. আজহারুল ইসলাম অবশেষে বললেন, “বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি জানা ছিল না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চুন্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মুখের হাসি, চোখের স্বপ্ন যেন মিলিয়ে না যায় শিক্ষক সংকটের আঁধারে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে হয়তো আবারও সরব হবে প্রতিটি ক্লাসরুম, ফিরে আসবে শিক্ষার প্রাণচঞ্চল দিন। রহিমা বেগমের একলা লড়াইয়ে যোগ দেবে আরও সহযোদ্ধা—এই আশাতেই দিন গুনছে চুন্দারপুরের শতাধিক শিক্ষার্থী।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

আমির খানের নতুন প্রেমিকা কে?

তৃতীয় বিয়ের গুঞ্জন সত্যি করে অবশেষে নতুন প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে আনলেন বলিউড অভিনেতা আমির খান। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এ...