Your Ads Here 100x100 |
---|
কলকাতা বইমেলা সবসময়ই বইপ্রেমী ও সাহিত্যিকদের মিলনের এক প্রাণবন্ত মঞ্চ ছিল। বহু দশক ধরে এই মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বিশেষ একটি স্বাদ এনে দিয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রকাশক, লেখক ও কবিরা নিয়মিত মেলায় অংশ নিয়ে শুধু তাদের সাহিত্যকে আলোড়িত করেনি, বরং দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনের সেতুবন্ধনও গড়ে তুলেছিলেন। তবে গত অগাস্টে দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর, ভারতের ভিসা নীতিতে পরিবর্তনের কারণে এবারের মেলায় বাংলাদেশ থেকে কোনো প্রতিনিধিত্ব আসতে পারেনি। এর ফলে, কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের স্টল বা প্যাভিলিয়নের অভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। মেলার অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, এই অনুপস্থিতি যেন এক প্লেট খাবারের মধ্যে নুনের অভাবের মতো – যেখানে একটি অপরিহার্য স্বাদটি হারিয়ে গেছে। অনেক প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও পাঠক এই শূন্যতাকে গভীরভাবে ব্যক্ত করেছেন।

একজন সুপরিচিত লেখক তার কথায় জানিয়েছেন, “মেলা যদি এক প্লেট খাবার হয়, তাহলে বাংলাদেশের অনুপস্থিতি মানে খাবারে নুনের অভাব।” তাঁর এই মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে, কিভাবে বাংলাদেশের বই ও লেখকদের উপস্থিতি মেলায় এক অতুলনীয় স্বাদ ও বৈচিত্র্য আনত। কলকাতার পাঠকরা, যাদের বছরভর অপেক্ষা থাকে এই বিশেষ মিলনের জন্য, তাঁদের মনে এখন এক প্রকার উদাসীনতা ও শূন্যতার অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছে। প্রকাশক, লেখক ও কবিরা মনে করেন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি শুধুমাত্র বইয়ের আদানপ্রদানে সীমাবদ্ধ নয়; এটি দুই দেশের মানুষের মধ্যে আন্তরিক বন্ধুত্ব, চিন্তাভাবনা ও সৃষ্টিশীলতার সেতুবন্ধন।
মেলার এই ঘাটতি শুধু একটি স্টল বা প্যাভিলিয়নের অভাব নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক বন্ধন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি অপরিহার্য অংশকে হারানোর মতো। অনেকেই আশাবাদী যে, বর্তমান পরিস্থিতির সাময়িক বাধা কাটিয়ে ওঠার পর আবার দুই দেশের মধ্যে সেই আদান-প্রদান ফিরবে। তরুণ পাঠিকা ও সাহিত্যিকরা বলছেন, “বাংলাদেশী বই ও লেখকদের স্বাদ এখানে খুবই অনন্য – তাঁদের অনুপস্থিতি স্পষ্টভাবে অনুভব করা যাচ্ছে, কিন্তু আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আবার সেই পূর্ণতা ফিরে আসবে।” এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কোনো ভূগোল বা রাজনৈতিক বাধায় আবদ্ধ নয়। বই, গল্প ও কবিতার মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে যে বন্ধন সৃষ্টি হয়, তা অতীব মূল্যবান। কলকাতা বইমেলা শুধুমাত্র বইয়ের মেলা নয়; এটি এক জীবন্ত উদযাপন যেখানে ভাষা, ভাবনা ও সৃষ্টিশীলতা মিলেমিশে এক নতুন ইতিহাস রচনা করে। আশা করা যায়, এই শূন্যতা সাময়িক এবং আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের লেখক, কবি ও প্রকাশকরা আবার সেই মেলায় অংশ নিয়ে দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধনকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। সাহিত্যই আমাদের একে অপরের হৃদয়ে পৌঁছানোর সেতুবন্ধন, যা কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন বা প্রশাসনিক বাধাই ভেঙে দিতে পারে না।
”নূর রাজু”