27.6 C
Dhaka
রবিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে মাদ্রাসা সুপারের আদালত অবমাননা; এমপিওভুক্তি নিয়ে গড়িমসি

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার পাঠানহাট মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে। রায় পাওয়ার বছর পেরিয়ে গেলেও মাদ্রাসার অফিস সহকারীর এমপিওভুক্তি নিয়ে টালবাহানা করছেন মাদ্রাসার সুপার ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতি। এ নিয়ে মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনও সুরাহা মিলছে না।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে পাঠানহাট মহিলা দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারীর শূন্য পদে যোগদান করেন উপজেলার খুলিয়াতারী গ্রামের আরিফুল ইসলাম। সে সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে তৎকালীন মাদ্রাসা সুপার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আরিফের এমপিওভুক্তি আটকে রাখেন। পরে ২০১৬ সালে পুনরায় ওই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করেন আরিফ। ২০২১ সালে নিম্ন আদালত আরিফকে বহাল রেখে রায় প্রদান করেন। কর্তৃপক্ষ কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। আপিল আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে ২০২৪ সালের জুন মাসে আদেশ দেন। কিন্তু এরপরও মাদ্রাসা সুপার ও ম্যানেজিং কমিটি আরিফের নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া অগ্রগামী না করে টালবাহানা শুরু করেন। শুরু হয় নিত্যনতুন হয়রানি।

ভুক্তভোগী আরিফ জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০ আগস্ট সরকার পরিপত্র দিয়ে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ বিলুপ্ত করে। এই সুযোগে মাদ্রাসা সুপার আবুল হোসেন ও রাজারহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুর রহমান যোগসাজশ করে নতুন ষড়যন্ত্র আঁটেন। তারা আরিফের কাছে ৬ লাখ টাকা দাবি করেন।

আরিফের অভিযোগ, মাদ্রাসা সুপার ও বিএনপি নেতার প্রস্তাব না মানায় সভাপতির পদ বিলুপ্ত হওয়ার ৯ দিন পর সুপার আবুল হোসেন ও বিএনপি নেতা আনিছুর যোগসাজশে মাদ্রাসার সাবেক সভাপতির সই সংবলিত কাগজ দিয়ে ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্টে আপিল রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল ইমরানের মধ্যস্থতায় আপিল রিভিশন মামলাটি প্রত্যাহারপূর্বক এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। খরচের কথা বলে সুপার আবুল হোসেন আরিফের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে চলতি বছরের ২৫ মে আপিল মামলাটি প্রত্যাহার করেন।

এর মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি নেতা আনিছুর মাদ্রাসার অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত হন। আবার আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে টালবাহানা শুরু করেন তারা। দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেলেও আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা হয়নি। আটকে আছে আরিফের এমপিওভুক্তি।

ভুক্তভোগী আরিফ বলেন, ‘১৭ বছর আগে নিয়োগ পেয়েছি। আইনি লড়াই করে আদালতের আদেশ পাওয়ার পরও এখনও এমপিওভুক্ত হতে পারছি না। নতুন করে চাকরিতে ঢোকার বয়সও নেই। আদালতের রায় নিয়ে মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছি না। আদালতের পর আর কার কাছে ন্যায়বিচার চাইবো? স্থানীয় প্রশাসন ও বিএনপি নেতৃবৃন্দকে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদ্রাসা সুপার আবুল হোসেন বলেন, ‘অফিস সহকারী আরিফ ২০২৩ সালে স্থানীয় একটি কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন। বিষয়টি মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যায় কিনা, এমন প্রশ্নে সুপার বলেন, ‘সেটা আমি জানি না। তাকে মাদ্রাসায় যোগদান করতে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু সে যোগদান করেনি।’

২০০৮ সালে যোগদান করার পরও একই প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার যোগদান করা যায় কিনা, এমন প্রশ্নে সুপার বলেন, ‘আমি ফোনে বিস্তারিত বলতে পারবো না। আপনি মাদ্রাসায় দাওয়াত নেন। বসে সব কথা বলা যাবে।’ তবে আপিল আবেদন প্রত্যাহারে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও বিএনপি নেতা আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোনও টাকা চাইনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার পাঁয়তারা। সে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিয়েছে। তাকে সেখানে ইস্তফা দিয়ে মাদ্রাসায় যোগদান করতে বলা হয়েছে। সে যেদিন ইস্তফা দিয়ে আসবে সেদিন আপনিসহ আসেন, তার যোগদানের ব্যবস্থা আমি নিজে করে দেবো।’

অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং ইস্তফা দেওয়া প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী আরিফ বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম এনটিআরসির কাছে চলে গেছে। সেখানে ২০২৩ সালে শিক্ষক পদে নিয়োগ বা যোগদান দেখানো জালিয়াতি ছাড়া কিছু নয়। আমাকে হয়রানি করার জন্যই জাল কাগজ তৈরি করে এসব বলা হচ্ছে। যেখানে যোগদান করিনি সেখানে ইস্তফা দেবো কীসের ভিত্তিতে?’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘আদালতের আদেশের প্রতি অবাধ্যতা নিশ্চিতভাবে আদালত অবমাননার অপরাধ। কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে আদালতের আদেশ প্রতিপালন করা। অন্যথায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি আদালত অবমাননার মামলাসহ ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।’
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

শেষ পর্যন্ত হাসল বাংলাদেশ

  খেলাধুলা ডেস্ক : জয় থেকে তখনও ২৫ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ। ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলছিলেন, “এখন থেকে ম্যাচটা একমাত্র বাংলাদেশেরই।”...