Your Ads Here 100x100 |
---|
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় মোছাঃ মর্জিনা খাতুন নামে ফকিরের কুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করে বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতি বছর নামমাত্র ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করছেন। চলতি বছরও ২৫ দিনের ছুটি নিয়ে তিনি ৮৩ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ফকিরেরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় শিক্ষক সমাজ ও সচেতন মহলের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও এখনো পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ফকিরেরকুটি এলাকার বাসিন্দা রানু মিয়া যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানকার নাগরিকত্ব নেন। তার স্ত্রী মর্জিনা খাতুন ফকিরেরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। তিনিও এখন নাগরিকত্বের জন্য প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি প্রতি বছর অল্প কিছুদিনের ছুটি নিয়ে চলে গেলেও পরে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, অথচ এই সময়ের মধ্যেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জনতার হাতে আটক খাদ্যগুদামের ২ ট্রাক পচা চাল
সরেজমিন ফকিরেরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক হাজিরা খাতায় মর্জিনা খাতুনের সর্বশেষ স্বাক্ষর ২ জুন তারিখে রয়েছে। এরপর ৩ জুন থেকে এখন পর্যন্ত (১৮ সেপ্টেম্বর) হাজিরা খাতায় তার কোনো উপস্থিতি নেই। এর আগেও ২২ মার্চ থেকে ১ জুন পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সহকারী শিক্ষিকা মর্জিনা খাতুন প্রথমে প্রধান শিক্ষকের কাছে তিন মাসের ছুটি চাইলেও তা অনুমোদন হয়নি। পরে তিনি রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কাছ থেকে ২৪ জুন থেকে ১৮ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ২৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর করান। স্কুলে এই ছুটির অনুমোদনপত্র পৌঁছেছে গত ২৫ জুলাই।
কুড়িগ্রামের চিলমারীর ফকিরেরকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, মর্জিনা খাতুনের ছুটির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। উপজেলা অফিস থেকে ২৫ দিনের একটি ছুটির অনুমোদনের পত্র পেয়েছি।
সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী অনুমোদিত ছুটির বাইরে অতিরিক্ত সময় অনুপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা শাস্তিমূলক পদক্ষেপের তথ্য পাওয়া যায়নি।
চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, মর্জিনা খাতুন ২৫ দিনের ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন অসুস্থ স্বামীকে দেখতে। এরপর তিনি দূতাবাসের মাধ্যমে ২০ জুলাই থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত আরও ৯০ দিনের ছুটির আবেদন করেছেন। এই আবেদনের একটি কপি পেয়েছি, তবে ছুটি অনুমোদনের কোনো চিঠি এখনো পাইনি।
এদিকে রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ওয়েবসাইটে ১৭ জুন তারিখে আপলোড হওয়া পরিপত্রে দেখা গেছে, শিক্ষিকা মর্জিনা খাতুনের জন্য শুধুমাত্র ২৫ দিনের বিদেশগমন ছুটি অনুমোদন রয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন করে ছুটি বাড়ানোর কোনো আদেশ পাওয়া যায়নি।
বিদেশে অবস্থান করায় শিক্ষিকা মর্জিনা খাতুনের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি ছুটি বাড়ানোর আবেদন করেছেন কিনা, তা আমার জানা নেই। যদি আবেদন করে থাকেন এবং তা অনুমোদিত না হয়ে থাকে, তবে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি