Your Ads Here 100x100 |
---|
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য পরিচালিত হচ্ছে। তবে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযানের ধরন ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন গুরুতর আহত হয়ে মারা যান। এরপর আন্দোলনের ছাত্র নেতারা সারা দেশে অভিযানের দাবি তোলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করে।
অভিযান শুরুর পর গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রথম পাঁচ দিনে সেখানে ৩৩২ জন আটক হন। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে অনেককে ।
একজন তরুণী জানিয়েছেন, তার মা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও মধ্যরাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের কাউকে ধরা হচ্ছে না, অথচ সাধারণ মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছে।”
এছাড়া, ৭০ বছরের বেশি বয়সী আওয়ামী লীগ নেতা মোমিনউদ্দিন ভান্ডারি-কে গ্রেপ্তার করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তার পরিবার জানায়, তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত এবং দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। তবু তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য
পুলিশ বলছে, তারা সরকারের নির্দেশনা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানিয়েছেন,
“অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে এমন যে কাউকে আমরা গ্রেপ্তার করছি।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন,
“ডেভিল মানে কী? শয়তানরাই তো টার্গেট। যারা আইন অমান্য করছে, তাদেরই ধরা হচ্ছে।”
মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন মনে করেন, এই অভিযানে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তিনি বলছেন,
“যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই বিগত সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অপরাধীদের দমন করার পরিবর্তে ভিন্নমত দমন করা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।”
পরিস্থিতির বিশ্লেষণ
সরকার এখনো স্পষ্ট করেনি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কতদিন চলবে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে অভিযান ব্যবহৃত হলে আইনের শাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা কেবল অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এই অভিযান দেশকে স্থিতিশীল করবে নাকি আরও অস্থিরতা বাড়াবে—তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।