Your Ads Here 100x100 |
---|
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে, একই সঙ্গে বিএনপিও ইসলামপন্থীদের পাশে পেতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এ অবস্থায় ইসলামি দলগুলোর মধ্যে কৌশলগত দ্বিধা দেখা দিয়েছে। যদিও এসব আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
বিএনপি ইসলামপন্থিদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামপন্থিদের ভোট একত্রিত করার চেষ্টা করছে। এই লক্ষ্যে পৃথকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দুই পক্ষ। বিএনপি ইতিমধ্যে ইসলামি আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গেও আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, যারা যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় ছিল না, এমন ইসলামি দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ জন্য একজন জ্যেষ্ঠ নেতা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াত প্রকাশ্যে তৎপর না থাকলেও ভেতরে-ভেতরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে। দলটির এই প্রচেষ্টায় ইসলামী আন্দোলনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জামায়াতের আমির বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর দলটি ইসলামি বক্তা, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সঙ্গেও মতবিনিময় করে। চরমোনাই পীরের বাড়িতে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আতিথেয়তা গ্রহণও এ প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক মনে করেন, বিএনপির সঙ্গে ইসলামি দলগুলোর আসন সমঝোতা বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে, তবে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে এবং ইসলামপন্থীদের ভোট একত্রিত করার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন সম্প্রতি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের বরিশালের বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। এরপর দল দুটির অবস্থান নির্বাচনী পরিকল্পনায় প্রায় অভিন্ন হয়ে ওঠে। পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ,ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে গিয়ে আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’সহ ১০টি বিষয়ে একমত হন।
একসময়ের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা মূলত আসন্ন নির্বাচনের কারণেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জামায়াত এবার অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করতে চায়, যেখানে বিএনপি জামায়াত ছাড়া ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে এগোচ্ছে। এতে ইসলামি দলগুলো বিভক্ত অবস্থানে পড়েছে।
এরই মধ্যে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সঙ্গে খেলাফত মজলিস এবং ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে ইসলামি দলগুলোর ভোট একত্রিত করা এবং একটি বৃহৎ নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “নির্বাচনে একটি বড় জোট গঠনের সম্ভাবনা এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব নিরসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ইসলামি দলগুলোর মধ্যে দোটানা ভাবের বিষয়ে বলেন, “আমি মনে করি না এতে কোনো দ্বিধা তৈরি হয়েছে। সবাই যথেষ্ট পরিপক্ব এবং চিন্তাভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে।”
অন্যদিকে, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে কোনো নির্দিষ্ট জোট ছিল না, তবে আমরা সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার পরিকল্পনা করছি।”
সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে আসন্ন সংলাপ ও সমঝোতার অগ্রগতির ওপর।