29 C
Dhaka
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

বাউলসম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিন আজ

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

অসংখ্য জনপ্রিয় বাউলগান ও গণসংগীতের রচয়িতা বাউল শাহ আব্দুল করিমের জন্মদিন আজ। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ধল-আশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান।
দারিদ্র্য ও জীবন-সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই।
শৈশব থেকেই একতারা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। জীবন কেটেছে সাদাসিধাভাবে।
বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নেন কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকসের কাছ থেকে। কিংবদন্তিতুল্য এই বাউল সশরীরে আমাদের মাঝে না থাকলেও তার গান ও সুরধারা সব স্তরের মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
কিংবদন্তিতুল্য এই শিল্পী ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর পর সর্বস্তরের বিশেষ করে সাধারণের কাছে আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বাউল শাহ আব্দুল করিম
শাহ আবদুল করিম বাংলার লোকজ সংগীতের ধারাকে অশ্বস্ত করেছেন অনায়াসে। ভাটি অঞ্চলের সুখ-দুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারী-পুরুষের মনের কথা ছোট ছোট বাক্যে প্রকাশ করেছেন আকর্ষণীয় সুরে।
ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।
তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে। জীবিকা নির্বাহ করেছেন কৃষিকাজ করে। কিন্তু কোনো কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। অসংখ্য গণজাগরণের গানের রচয়িতা বাউল শাহ আব্দুল করিম অত্যন্ত সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন।
গানে-গানে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এ জন্য মৌলবাদীদের নানা লাঞ্ছনারও শিকার হয়েছিলেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কাগমারী সম্মেলন, ভাষার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মানুষকে প্রেরণা জোগায় শাহ আবদুল করিমের গান।
শাহ আবদুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন এক হাজার ৬০০-র বেশি গানে। যেগুলো সাতটি বইয়ে গ্রন্থিত আছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।
কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধুমাত্র ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। পেয়েছেন একুশে পদক।
শাকুর মজিদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ভাটির পুরুষ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র। এখনো সুবচন নাট্য সংসদ করিমকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা ‘মহাজনের নাও’ নাটকের প্রদর্শনী করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এ ছাড়া ২০১৭ শাহ আবদুল করিমের জীবনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস লেখেন সাইমন জাকারিয়া। নাম কূলহারা কলঙ্কিনী।
বাউলসম্রাট আব্দুল করিমের গানের মধ্যে দিয়ে তাকে খুঁজতে প্রতিদিন ভক্ত ও স্বজনরা গানের আসর বসান। তার গান গেয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা আর গানের মধ্যে তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই সবার মাঝে তার গান ছড়িয়ে দিতে চান ভক্ত আশেকানরা। একইসঙ্গে তার সুরধারাকে বিকৃতভাবে না গাওয়ার দাবিও তুলেছেন বাউলরা।
বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে/আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না/আমি কূলহারা কলঙ্কিনী/কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া কোন মেস্তরি নাও বানাইছে/কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু/বসন্ত বাতাসে সইগো/আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু/মহাজনে বানাইয়াছে ময়ুরপংখী নাও/আমি বাংলা মায়ের ছেলেসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা শাহ আব্দুল করিম না থাকলেও গানে আর সুরে তিনি আমাদের মাঝে রয়েছেন, অনন্তকাল থাকবেন।
একটি সাক্ষাৎকারে শাহ আবদুল করিম গাড়ি চলে না গানটি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, বন্ধুর বাড়ি এ আত্মায়। গাড়িতে চড়ে আত্মশুদ্ধির সন্ধানে ছুটি। কিন্তু পাই না। রিপু থামিয়ে দেয়। একদিন হয়ত এই গাড়ি পুরোদমে থেমে যাবে। প্রকৃত মালিকের কাছে ধরা দেবে। এই করিমকে তখন মানুষ খুঁজে পাবে শুধুই গানে আর সুরে।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

কী অবস্থা মাগুরার সেই শোকার্ত গ্রামটির।

প্রায় আট দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে পরাজিত হওয়া মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুটির বাড়িতে এখনো শোকের ছায়া।...