Your Ads Here 100x100 |
---|
সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে অপরাধের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ অব্যাহত রয়েছে। এমনকি চলমান ‘ডেভিল হান্ট’ কর্মসূচির মাঝেও অপরাধীরা দমে যাচ্ছে না, বরং আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। জনসমাগমপূর্ণ এলাকাগুলোতেও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুতই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বিশেষ করে রাতে রাজধানীর প্রধান সড়ক ও গলিপথে যৌথ বাহিনীর টহল বাড়ানো হবে। এছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে চেকপোস্ট বসানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রয়োজনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাও দৈনন্দিন হয়ে উঠেছে। এসব অপরাধের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সারা দেশে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরি এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোর কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করা হয়। বৈঠকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে কঠোর অভিযান শুরু হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে।
অপরাধ বৃদ্ধির কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অপরাধের খবর গ্রামের মানুষকেও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেছে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি তুলেছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অস্থিরতা অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির মূল কারণ। মাওলানা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক মনে করেন, সমাজে নিয়ন্ত্রণের অভাব ও রাষ্ট্রীয় কঠোর নজরদারির অভাবের কারণে অপরাধ বাড়ছে। অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত আরও কঠোর মনোভাব গ্রহণ করা।
অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরি বলেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধ কমাতে হলে প্রথমে এসব অপরাধের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারলে অপরাধের হার কমবে।
সাম্প্রতিক কিছু ভয়াবহ অপরাধের মধ্যে রয়েছে মিরপুরের বেনারসি পল্লিতে এক রাতে ছয়টি দোকান ও দুটি বাসায় ডাকাতি, চুয়াডাঙ্গায় স্বামীর ওপর হামলা চালিয়ে স্ত্রীর গয়না লুট, গাজীপুরে স্টুডিও কর্মচারীর দ্বারা মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণ, কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা। এছাড়া, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে একটি বাসে ডাকাতি ও নারীযাত্রীদের হয়রানির ঘটনাও ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে ২৩০টি ডাকাতির মামলা হলেও জানুয়ারিতে তা বেড়ে ২৪২টিতে দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বরে ২০৪টি হত্যা মামলা হয়, যা জানুয়ারিতে বেড়ে ২৯৪টি হয়েছে। ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা হয়েছে শেষ ছয় মাসে ১১৪৫টি। ডিসেম্বরে ৭৪টি অপহরণের মামলা হয়, জানুয়ারিতে তা বেড়ে ১০৫টিতে দাঁড়িয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে।