27 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ কি নতুন দলের স্লোগান,

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে দলটির অধিকাংশ শীর্ষ নেতা তাঁদের বক্তব্য শেষ করেছেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, দলটি কি এই স্লোগানকে নিজেদের আনুষ্ঠানিক স্লোগান হিসেবে গ্রহণ করেছে?

দল গঠনের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান ব্যবহার করতেন। ২৮ ফেব্রুয়ারির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অনেক নেতা একই স্লোগান ব্যবহার করায় কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

প্রখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের মতে, ১৯২১ সালে মাওলানা হাসরাত মোহানি (১৮৭৫-১৯৫১) প্রথম ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে এটি উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের নেতা ভগত সিংও উচ্চারণ করেন। হাসরাত মোহানি ছিলেন উর্দু ভাষার কবি, শ্রমিকনেতা এবং ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন।

উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলার মোহন শহরে জন্ম নেওয়া হাসরাত মোহানির প্রকৃত নাম ছিল ফজলুল হাসান। বিপ্লবী উর্দু কবি হিসেবে ‘হাসরাত’ ছিল তাঁর ছদ্মনাম, যা রাজনৈতিক অঙ্গনেও তাঁকে পরিচিতি দেয়। তিনি ভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপনকারী প্রথম নেতাদের একজন ছিলেন।

ব্রিটিশ শাসনের পতনের পর তিনি ভারতের গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বা ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগানটি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি এখনও ব্যবহার করে। বাংলাদেশে অতীতে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরাও এটি ব্যবহার করতেন।

ইরফান হাবিবের লেখায় দেখা যায়, ১৯২৯ সালে আদালতে দেওয়া এক জবানবন্দিতে ভগত সিং বলেছিলেন, ‘ইনকিলাব মানে কেবল বোমা বা পিস্তলের ব্যবহার নয়; বরং অন্যায়ের ভিত্তিতে দাঁড়ানো যে কোনো ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করাই প্রকৃত বিপ্লব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক জাফর আহমেদ ভূঁইয়ার মতে, ‘ইনকিলাব’ শব্দটি আরবি এবং ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি উর্দু থেকে এসেছে। ‘জিন্দাবাদ’ মানে অভিনন্দন জানানো, ফলে স্লোগানটির অর্থ দাঁড়ায় ‘বিপ্লবকে অভিনন্দন’।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, দলটি এখনো তাদের আনুষ্ঠানিক স্লোগান নির্ধারণ করেনি। জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় এই স্লোগানটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল, তাই তা দলীয় কর্মসূচিতে রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলীয় স্লোগান ও মূলনীতি চূড়ান্ত করা হয়নি। আপাতত আত্মপ্রকাশ, কমিটি ঘোষণা ও ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য বিষয় ভবিষ্যতে নির্ধারিত হবে।’

২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের দলটি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে। দলটির অন্যতম লক্ষ্য জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন দলটির সাংগঠনিক কাঠামোর ঘোষণা দেন। আহ্বায়ক কমিটিতে ১৭১ জনের নাম রয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান ব্যবহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, এটি দলটির মধ্যপন্থী অবস্থানের পরিবর্তন নির্দেশ করে না। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত তাদের পরিচিতি তুলে ধরতে স্লোগান, পতাকা ও লোগো ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, ‘তাঁদের মতে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান যদি একটি বিপ্লব হয়, তাহলে সেই বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক—এই অর্থেই তাঁরা স্লোগানটি ব্যবহার করছেন।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাসে বিভিন্ন সময় স্লোগান পরিবর্তনের নজির রয়েছে। জাসদ ‘বাংলার মেহনতি মানুষের জয় হোক, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগান দিয়েছিল। বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান চালু করে। এখন জাতীয় নাগরিক পার্টি ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান ব্যবহার করছে, যা তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত করছে।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

আমির খানের নতুন প্রেমিকা কে?

তৃতীয় বিয়ের গুঞ্জন সত্যি করে অবশেষে নতুন প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে আনলেন বলিউড অভিনেতা আমির খান। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এ...