27 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির ত্রিমুখী লড়াই

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও এর আগেও কেউ কেউ গণপরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলেছেন, তবে তা এতটা গুরুত্ব পায়নি। এবার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে, কারণ ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিন গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তোলে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছে—কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে।

এনসিপির দাবি, গণপরিষদ নির্বাচন নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য জরুরি। দলটি মনে করে, বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে গণপরিষদ নির্বাচন অপরিহার্য।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আন্দোলনরত দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের আবহ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দল তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে। বিএনপি বরাবরই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে, জামায়াতে ইসলামী সংস্কারের পর ‘যৌক্তিক সময়ের’ মধ্যে নির্বাচন চায়, আর অন্যান্য দলও নানাভাবে এই দুই অবস্থানের মধ্যে রয়েছে।

এদিকে, বিএনপি গণপরিষদ নির্বাচনকে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যারা গণপরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলছে, তারা হয় বুঝতে পারছে না অথবা তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বর্তমান পরিস্থিতিকে দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছে।’

কিন্তু গণপরিষদ নির্বাচন হলে কি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে যাবে? রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন এ প্রশ্ন উঠছে, তখন নির্বাচন কমিশন বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, ‘আমরা যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করি, তাহলে জাতীয় নির্বাচন অনেক পিছিয়ে যাবে। তখন প্রধান উপদেষ্টার নির্ধারিত ডিসেম্বর বা জুনের সময়সীমা মানা সম্ভব হবে না।’

ফলে, রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতীয় সংসদ, গণপরিষদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। বিএনপি ইতোমধ্যে সেকেন্ড রিপাবলিক, নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবির বিরোধিতা করেছে। বিএনপির মতে, এসব দাবি তোলার পেছনে মূল উদ্দেশ্য জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যে কেউ যে কোনো কথা বলতেই পারে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা ইতোমধ্যে অনেক দেরি করে ফেলেছি, আর দেরি করলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।’

অন্যদিকে, এনসিপি দাবি করছে, তারা জাতীয় নির্বাচন পেছানোর পক্ষে নয়। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তোলা মানে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কথা বলা নয়। আমাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দুটি নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব, এতে কোনো সমস্যা নেই।’

এদিকে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক চলছে। বিএনপি মনে করছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। তবে জামায়াতে ইসলামী চায়, স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বর্তমানে কোনো সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়া জরুরি।’

তবে বিএনপি স্থানীয় নির্বাচন আগে করার বিপক্ষে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকারের ম্যান্ডেটেই যখন জাতীয় নির্বাচন, তখন তারা কেন স্থানীয় নির্বাচন করতে চাইছে? তারা যদি স্থানীয় নির্বাচনই করতে চায়, তাহলে ট্রেড বডি থেকে শুরু করে মসজিদ কমিটি—সব কিছুরই নির্বাচন করে তারপর জাতীয় নির্বাচন দিক!’

জাতীয় নাগরিক পার্টিও চায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক। তবে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব বলেন, ‘যদি সারাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব না হয়, তাহলে নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলা বা উপজেলায় নির্বাচন হতে পারে। এতে প্রশাসনের প্রস্তুতি যাচাই করা যাবে।’

তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হলে এক বছরের বেশি সময় লাগবে, যা জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন ধাপে ধাপে করতে হয়। এটি করতে গেলে সময় লাগবে। ফলে প্রধান উপদেষ্টার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাবে।’

এদিকে, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ভোটার তালিকা, আসন বিন্যাস ও রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন চূড়ান্ত করা হবে জুনের মধ্যেই। এরপর আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করব। আমাদের মূল লক্ষ্য ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্পন্ন করা।’

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

আমির খানের নতুন প্রেমিকা কে?

তৃতীয় বিয়ের গুঞ্জন সত্যি করে অবশেষে নতুন প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে আনলেন বলিউড অভিনেতা আমির খান। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এ...