Your Ads Here 100x100 |
---|
অভিমন্যু মোহন্ত, স্টাফ রিপোর্টার | খবরের দেশ |
প্রবাসী বাঙালি গায়ক, গীতিকার ও সুরকার আরজীন বাংলা সংগীত জগতেের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। বাংলাদেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শিল্পী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, যেখানে তিনি বাংলা ফোক এবং ইন্ডি পপ দুই ধারাতেই সংগীত পরিবেশন করছেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সংগীত প্রযোজকদের সঙ্গে বাংলা গানের নিরীক্ষামূলক কাজেও যুক্ত রয়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই সংগীত চর্চায় অভ্যস্ত আরজীন, আলতাফ মাহমুদ মিউজিক একাডেমি ও বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে নজরুল সংগীতের তালিম নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পণ্ডিত গিরিশ চ্যাটার্জির কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শিখছেন। তার সংগীত প্রতিভার প্রথম ছাপ পড়ে বাংলা চলচ্চিত্র ‘প্রিয়তমা’র মাধ্যমে। যেখানে তিনি তোমার পরশ শিরোনামের গান প্লেব্যাক করেন।

বাংলা নববর্ষ ১৪ এপ্রিল, ২০২২-এ আরজীন তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করেন। যেখানে ‘বন্ধু বাজাও সুর’ গানটি বাংলাদেশ ও ভারতের শ্রোতাদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে। এর আগে তার ‘প্রেম দে’ গানটি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক রেকর্ড লেবেল পিঙ্কটারবান থেকে প্রকাশিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার জনপ্রিয় ডিজে ও সংগীত প্রযোজক দাস ক্যাপিটাল সেই গানের রিমিক্স তৈরি করেন, যা বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কে সম্প্রচারিত হয়।

আরজীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইকেডেলিক পপ ব্যান্ড ‘মিস্টিকাল জয়রাইড’-এর একজন সদস্য, যেখানে তিনি ইংরেজি-বাংলা ফিউশন গান তৈরি করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার বিভিন্ন সঙ্গীত উৎসবে বাংলা গান পরিবেশন করেছেন, যার মধ্যে ২০২৩ সালের ‘লাইটেনিং ইন দ্য বটল’ অন্যতম। ২০১৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের Department of Cultural Affairs ও Promise Zone LA-এর আমন্ত্রণে বাংলা ফোক গানের পরিবেশনা ছিল তার জন্য এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। পরবর্তীতে, লস অ্যাঞ্জেলেস কালচারাল অ্যাফেয়ার্স ওয়েবসাইটে তার কিছু লাইভ পরিবেশনা ও সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।
শ্রোতাদের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনে বিশ্বাসী আরজীন বলেন, ‘আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই, যখন প্রবাসে আমার গান শুনে কোনো অবাঙালি শ্রোতা বাংলা গান ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চায়। আমার গানের আসল শক্তি আমার শ্রোতারা, কারণ তাদের অংশগ্রহণেই সংগীত পরিপূর্ণতা পায়।
শিক্ষাজীবনে আরজীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বৃত্তি ফুলব্রাইট নিয়ে নর্দার্ন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।

বর্তমানে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী আরজীন কামাল, মার্কিন মুল্লুক থেকে বাংলা গানের চর্চা করে চলেছেন অবিরত। ঠিক এই সময়ে তাঁর মৌলিক গান ‘কালা-কালা’ যা ট্রেন্ডিংয়ে, গানটি হয়তো অনেকেই শুনেছেন। আরজীন কামালের গানের জার্নি নিয়ে দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রথম পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের দেশের স্টাফ রিপোর্টার অভিমন্যু মোহন্ত ।
খবরের দেশ: আপনার সংগীত যাত্রার শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
আরজীন: আমার সংগীত যাত্রা আমার বড় বোনের কাছ থেকেই কারণ ও ছোটবেলার থেকেই গান শিখতো; আর আমরা পিঠাপিঠি। প্রায় ৪বছর বয়সেই ওকে হারমোনিয়াম দিয়ে গান শেখানো হয় যশোরে। ওর শিক্ষকের নাম ছিলো মধু দা, সবাই ওনাকে মধু দা বলেই ডাকতো। এটাই আমার অল্প অল্প মনে পড়ে।
আমি এখান থেকেই অনুপ্রাণিত। আমার হাতেখড়ি আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন আর পরবর্তী আরেকটু এডভান্স লেভেলে বুলবুল এ্যকাডেমি থেকে নজরুল সংগীতে।

খবরের দেশ: আপনার প্রিয় সংগীতশিল্পী বা অনুপ্রেরণার উৎস কে?
আরজীন: আমার অনেক শিল্পী-ই পছন্দ তার থেকে বলবো আমার গান পছন্দ। আমি গান খুঁজি আরকি তারপর…গানটি কে গাইলো সেভাবে আমি এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করি। লালন আমার ভীষণ ইন্সপিরেশন জুগিয়েছে তারপর বলবো কবীর সুমন (কলেজ/ইউনিভার্সিটি জীবনে)
ছোটবেলার থেকেই খুব গান শোনা হতো আমার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে এনাদের ক্যাসেট বাড়িতে চলতো সবসময়। রুনা লায়লা, হৈমন্তী শুক্লা, প্রতিমা মুখোপাধ্যায় আসলে অনেক অনেক, এভাবে বলা মুশকিল বয়স বাড়ার সাথে আরও অনেকবেশি এক্সপ্লোর করি।
কথা সমৃদ্ধ গান খুব বেশি ভালো লাগে। মৌসুমি ভৌমিক ভালো লাগতো; এখন আসীর আরমানের কথা খুব ভালো লাগে শুনি। যেকোনো নতুন শিল্পীর গান, গান শুনলেই আমার ভালো লাগে।
মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী একটু আগেই শুনছিলাম, ইউসুফ গাইছিলো তার ভাইয়ের সাথে মিলে, ওর বাবা ইয়াকুব স্যার শিক্ষকও ছিলেন আমার বাফা তে। আমি স্পটিফাইতে অনেক গান শুনি।

খবরের দেশ: আপনার মতে শ্রোতাদের মন জয় করার রহস্য কী?
আরজীন: আমি যখন কোন একটা পারফরম্যান্সে যাই; সামহাউ আমার সাথে কানেক্ট করতে পারে (শ্রোতা), আমার ভালো লাগে ঐ এক্সপেরিয়েন্সটা, মানে শ্রোতারাই আমাকে অনেক কিছু দেয়। আমি যখন পারফর্ম করছি আমার মনে হয়- বিভিন্ন মানুষের যে এনার্জিটা, ঐটুকু সময়ের জন্য যে তারা সবকিছু ভুলে আমার গানটার আনন্দ নিচ্ছে সেটা আমার ভালো লাগে। আমার মনে হয় এটা একটা চমৎকার এনার্জি এক্সচেঞ্জ হয়। শুধুমাত্র নিজে গাইলেই হয়না, আসলে শ্রোতা কতটুকু নিচ্ছে!
খবরের দেশ: আপনার জীবন থেকে এমন কোনো ঘটনা শেয়ার করুন যা আপনার গান তৈরিতে সাহায্য করেছে।
আরজীন: ছোটবেলা থেকে গান লেখার বিষয়টি ছিলো আসলে, সত্যিকথা কিন্তু আমার একটু লজ্জা লাগতো বলে আমি কাউকে কিছু বলাতামনা। জাহাঙ্গীরনগরে যখন আমি ভর্তি হই, তখন আমি দেখি আশেপাশের ভাই-বোন ওরা গান লিখছে সুর করছে; তখন মনে হল-গান লেখা যায়। তখন আস্তে আস্তে আমি এক্সপ্লোর করা শুরু করি; মানে প্রকাশ করার চেষ্টা করি, আমিও এ-কাজটা জানি। প্রথমদিকে আমার একটু ইতস্তত বোধ করতাম এগুলো নিয়ে কথা বলতে। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার করতাম, একদিন প্রবাল ভাই এসে আমাকে জসিমউদদীনের ‘নকশীকাঁথার মাঠ’-এর কিছু লাইন দিয়ে বললো তুই এটার সুর কর! আমি অবাক হয়ে গেলাম। উনি কী করে জানেন আমি সুর করতে জানি বা কিছু! সুরারোপের কাজটিতে আসলে খুবই ইন্সপায়ার হই, এটা আমার কাছে একটা ভালো অভিজ্ঞতা।

খবরের দেশ: আপনার প্রথম গান প্রকাশের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আরজীন: আমি যখন নিজের গান প্রকাশ করা শুরু করি তখন আমি মাস্টার্সে উঠে গ্যাছি। জাহাঙ্গীরনগরে কেউ আসলে জানতেই পারেনি আমি লিখতে পারি সুর করতে পারি ও গাইতে পারি। খুবই অল্প কিছু সংখ্যক লোক জানতো, এরপর আমি সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে যোগ দেই, সেখানে আমার গানগুলি গাইতাম। আমার লেখা ও সুর করা গানগুলো। ওটাই আমি বলবো প্রকাশ।
চলবে, দ্বিতীয় পর্ব আসছে…