Your Ads Here 100x100 |
---|
লালমনিরহাট জেলার ৫ টি উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ২৫,৯৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা ৩০,৫০০ হেক্টরের কাছাকাছি । কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার তুলনায় এ জেলায় ভুট্টা চাষের ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি। তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলে বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভুট্টার ফলন প্রতি বিঘায় ৩৫-৪০ মণ পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে, যা সমতলের তুলনায় প্রায় ৩০% বেশি।
প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষে খরচ পড়ছে ১২,০০০–১৫,০০০ টাকা, বিক্রি করে আয় হচ্ছে ৩০,০০০–৪৫,০০০ টাকা। উন্নত বীজ ও কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে গত দুই দশকে উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে।
সুশান্ত কুমার সিংহ (৩৫) হাতীবান্ধার এক জন কৃষক, তিনি জানান, “প্রতি একরে ফলন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০–১৪০ মণ। পোল্ট্রি ফিড কোম্পানিগুলো অগ্রিম টাকা দিয়ে ভুট্টা কিনে নেয়, যা কৃষকদের ঝুঁকি কমায়।”
তবে ভুট্টার বীজের ১০০% আমদানি করা হয়, যার দাম স্থানীয় ভুট্টার চেয়ে ৫০ গুণ বেশি (প্রতি কেজি ৫৫০–৯৫০ টাকা)। আর ভরা মৌসুমে ব্যবসায়ীরা ভুট্টা কম দামে কিনে স্টক করে এবং কারখানায় উচ্চমূল্যে বিক্রি করে যার দরুন কৃষকেরা লাভের পুরো অংশ পাচ্ছেন না । চরাঞ্চলে সড়ক ও গুদামের অভাবে উৎপাদিত ভুট্টা বাজারে নিয়ে যেতে অতিরিক্ত খরচ হয় কৃষকের।

লালমনিরহাটকে “ভুট্টার রাজধানী” হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। গত ২৫ বছরে এ জেলার ৫০,০০০ বেশী কৃষক ভুট্টা চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভুট্টা এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে বছরে ৫৫–৬০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়, যা আমদানির প্রয়োজন ২০–৩০% কমিয়েছে।
পোল্ট্রি ফিড, বেকারি শিল্প ও গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার চাহিদা বাড়ায় কৃষকদের আয়ের স্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ৩০,৫৫০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করলে কৃষকরা সরাসরি বাজার ধরতে পারবেন, যা মুনাফা বাড়াবে। চরের কৃষকদের জন্য পরিকল্পিত নদী ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে ।
বড়খাতা ইউনিয়নের কৃষক আসাদুজ্জামান (৬২) বলেন, “১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে ৫৮০–৬০০ মণ ফলন আশা করছি। গতবারের চেয়ে ভুট্টার দাম বাড়লে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরবে।”
পাটগ্রাম উপজেলার একজন কৃষক নুর ইসলাম (৫০) বলেন “ভুট্টা চাষে ঘরে টিভি-ফ্রিজ এসেছে, সন্তানরা উচ্চশিক্ষা পাচ্ছে।”
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলমের মতে, ১০% বার্ষিক হারে ভুট্টা চাষ বাড়লে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ ভুট্টায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে । তবে বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সমন্বিত নীতি প্রয়োজন।
লালমনিরহাটের ভুট্টা চাষের এই সাফল্য দেখে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ভুট্টা চাষের সম্প্রসারণ হতে পারে, যা কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।