30 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরুটা যেভাবে হয়েছিল

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
অনলাইন ডেস্ক, খবরের দেশ:

বৈশাখী উৎসবের ইতিহাস সুপ্রাচীন হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস বেশি দিনের নয়। ১৯৮৫ সালের পয়লা বৈশাখ যশোরে প্রথম এই ব্যতিক্রমী শোভাযাত্রার সূচনা হয়। সে সময় দেশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসন জারি ছিল। এই শোভাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরার মাধ্যমে সব স্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। একই সঙ্গে অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভশক্তির আগমন কামনা করা হয়েছিল। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের নেপথ্যে ছিলেন চারুশিল্পী মাহবুব জামাল শামিম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা শেষ করে মাহবুব জামাল শামিম যশোরে ফিরে যান এবং সেখানে ‘চারুপিঠ’ নামে একটি শিল্পচর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, তবে যশোরের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি এই শোভাযাত্রা।

১৯৮৯ সালের পয়লা বৈশাখে ঢাকার চারুকলা থেকেও শুরু হয় একই ধরনের শোভাযাত্রা। শুরুতে এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। তবে পরবর্তীতে এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামেই পরিচিতি লাভ করে।

সেই সময়ের শোভাযাত্রার মূল সুর ছিল অগণতান্ত্রিক শক্তির বিনাশের আকাঙ্ক্ষা। তখন এরশাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রচেষ্টায় সব স্তরের মানুষকে একই প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৮৫-৮৬ সালের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাই মূলত প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা ছিলেন। শিক্ষকেরা তাঁদের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, কিন্তু মূল কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন শিক্ষার্থীরাই। বর্তমানে পয়লা বৈশাখের এই শোভাযাত্রা ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের অংশগ্রহণে এক প্রধান জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।

এই শোভাযাত্রা বর্ণিল রঙে সেজে ওঠে। আবহমান বাংলার বিভিন্ন লোকজ উপাদানের উপস্থিতি শোভাযাত্রাকে এক ভিন্ন মাত্রা দেয়। শোভাযাত্রা উপলক্ষে হাতে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের মুখোশ, লোকজ মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, নকশি পাখি ও বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রতিকৃতি। এই শোভাযাত্রাকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য শুরু থেকেই দেশের লোকশিল্পের নানা ধরনের খেলনা ও উপাদান ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ঘোড়া, নকশি পাখা, ফুল, প্রজাপতি, মানুষ এবং প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ শোভাযাত্রায় স্থান পায়। অবশ্য কখনো কখনো এতে রাজনৈতিক অনুষঙ্গও যুক্ত হয়েছে।

১৯৮৯ সালের প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রায় পাপেট, ঘোড়া ও হাতির প্রতিকৃতি বিশেষভাবে নজর কেড়েছিল। ১৯৯০ সালের আনন্দ শোভাযাত্রায়ও বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি দেখা যায়। ১৯৯১ সালে চারুকলার শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তার এক নতুন শিখরে পৌঁছায়। চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিল্পীদের উদ্যোগে আয়োজিত সেই শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য, বিশিষ্ট লেখক, শিল্পীসহ সাধারণ নাগরিকেরা অংশ নেন। শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালাকার হাতি ও বাঘের কারুকার্যময় প্রতিকৃতি। কৃত্রিম ঢাকের বাদ্য আর অসংখ্য মুখোশখচিত প্ল্যাকার্ড শোভাযাত্রায় এক আনন্দময় ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শোভাযাত্রা আরও বর্ণিল ও সমৃদ্ধ হয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আয়োজনের জন্য কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা নেওয়া হয় না। চারুকলার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অনেক চিত্রশিল্পী তাঁদের আঁকা ছবি বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন করেন, সেটাই এই শোভাযাত্রা আয়োজনের মূল উৎস। একসময় শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত মুখোশ ও অন্যান্য উপকরণ নিলামে তোলা হতো এবং সেই অর্থ পরবর্তী শোভাযাত্রার জন্য ব্যয় করা হতো। বর্তমানে চারুকলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এক মাস আগে থেকেই এই প্রস্তুতি শুরু করেন এবং তাঁদের শিল্পকর্ম বিক্রি করে শোভাযাত্রার তহবিল সংগ্রহ করেন।

বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে। ইউনেসকো তাদের ‘রিপ্রেজেনটেটিভ লিস্ট অব ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তালিকায় এই শোভাযাত্রাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা পায় এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এখন এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব সংস্কৃতিরও অংশ। বাঙালি সংস্কৃতি এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আরও বিস্তৃত হয়েছে।

ইউনেসকো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে, এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের নয়, বরং এটি সমগ্র দেশ ও বিশ্বের মানুষের ঐতিহ্য।

তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া | হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, গোলাম মুরশিদ |

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

বাংলাদেশ থেকে আরও নারী শান্তিরক্ষী নিয়োগে জাতিসংঘকে আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নিউজ ডেস্ক জাতিসংঘকে বাংলাদেশ থেকে আরও নারী শান্তিরক্ষী নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি...