Your Ads Here 100x100 |
---|
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তনের প্রকৃত কারণ জানানোর দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ দাবি জানান। এ সময় চারুকলার বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরের সময় চারুকলায় কি ঘটেছে এবং প্রশাসন ও নিরাপত্তার কি বেহাল দশা! আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই পুরো ঘটনায় প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এ নিয়ে আমরা হতাশ। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীকে শনাক্ত না করা হচ্ছে, সেটা চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য ভীতির সঞ্চার করে। কারণ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের বিভিন্ন ট্যাগের শিকার করছেন যার কিছু দলিলিক প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা ঐতিহ্যগতভাবে চারুকলার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মিলে প্রতিবার বৈশাখের আয়োজন করার চেষ্টা করে থাকি। বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখে এসেছি, আওয়ামী লীগের স্বার্থরক্ষার্থে বিরুদ্ধমত দমনের মাধ্যমে বৈশাখ উদযাপন স্বতন্ত্রতা হারিয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের পরে আমাদের কাম্য ছিল স্বতন্ত্র ও স্বতঃস্ফূর্ত একটি বৈশাখের আয়োজন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এবারও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে ফ্যাসিস্ট রেজিমের মতোই বৈশাখ শেকল মুক্ত নয় এবং আমরা যখন এই বিষয়ে বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করেছি, আমাদেরক আওয়ামী দোসরসহ অনলাইনে, অফলাইনে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে, যেটার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও অগ্নিসংযোগকারী অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে শাস্তির আহ্বান করছি।
আমরা দেখতে পাই যে, এর আগে, এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে জানানো হয় যে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে উদযাপিত হবে।
আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। এই নাম কেন পরিবর্তন করা হয়েছে তা আমরা জানতে চাই। চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে বৈশাখের আয়োজনে শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্যতম ভূমিকা রাখে শিক্ষার্থীরা।
চারুকলার এই আয়োজন ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে হয়ে এলেও একটা অসংলগ্ন যুক্তি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের অসমর্থিত ও কোনোরকম আলোচনা বা মতামত গ্রহণ না করে ফ্যাসিস্ট আমলের প্রস্তাবনাকে সম্মতি দিয়ে এই আয়োজন শিক্ষকেরা ছাত্রদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছেন। তবুও শিক্ষার্থীরা বিগত ২৭ মার্চ শিক্ষকদের কাছে বৈশাখের আয়োজনের জন্য ফিলিস্তিনের প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি রেখে এক ফালি তরমুজের কাঠামো বানানোর জন্য শিক্ষার্থীরা প্রস্তাব করে। কিছুদিন নানা অজুহাতে ঘুরিয়ে আমাদের প্রস্তাবকে নাকচ করে দেয়া হয়।
মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করা যাচ্ছে না বলে আন-অফিশিয়ালি জানানো হয়। এই ঘটনার পরও শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে দুইবার প্রস্তাব করা হয়, যাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি স্থাপনে এই শোভাযাত্রায় তরমুজের কাঠামো বানানো হয়।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবারও কোনো কিছু না জানিয়ে হুট করে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, তরমুজের কাঠামো বানানো হবে। আমরা এই ধরনের রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তের পূর্ণ বিরোধিতা করছি। তরমুজের কাঠামো বানানো হচ্ছে এখন। তবে আমাদের প্রস্তাবে সমর্থন না করে বারংবার রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট আমলের আওতা থেকে শিল্পীরা বের হয়ে কাজ করতে পারছেন না।
এই ধরনের কার্যকলাপ আমাদের বিগত রেজিমের কথাই মনে করিয়ে দেয় যেখানে চাইলেই আমরা শিল্পচর্চা ও এমন গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলো স্বাধীনভাবে করতে পারতাম না, রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ সেখানে মুখ্য ভূমিকা রাখতো।
বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমের চারুকলার ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেন যে বৈশাখ আয়োজন কে একাডেমিক ক্রেডিটে অন্তর্ভুক্ত করবেন, কিন্তু সেই সময়েই চারুকলার শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফূর্ত এই আয়োজনকে ক্রেডিটে অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষে অবস্থায় নিলে তিনি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারেন নি।
আমরা জুলাই আন্দোলনের পরে দেখতে পাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের অসমর্থিত ফ্যাসিস্ট আমলের প্রস্তাবনা অগুরুত্বপূর্ণ দুই ক্রেডিটের কোর্স হিসেবে এই আয়োজন শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের উপর আবার ক্লাস হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা এই কারিকুলামের সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক মত নই।
ফ্যাসিস্ট আমলের নেয়া সিদ্ধান্ত বর্তমমানের সো কল্ড ফ্যাসিবাদী বিরোধী প্রশাসন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা বিগত ১৩ই মার্চ একটি বৈশাখ প্রস্তুতির সাধারণ সভার আয়োজন করে, যেখানে তারা এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করে। শিক্ষকদের ভাষ্য মতে তারা এই সাধারণ সভায় সবার সম্মতি ক্রমেই ব্যাচ ভিত্তিক আয়োজক কমিটি না বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এই জায়গায় আমরা দ্বিমত করছি, কেননা এই “সকল শিক্ষার্থী” বলতে মূলত ১ম বর্ষ (যারা এই আয়োজন সম্পর্কে একেবারে কিছুই জানেনা) এবং ২য় বর্ষ (যারা বিগত কয়েক বছর রমজান মাসের মধ্যে এই আয়োজন থাকায় ফুল স্কেলে বৈশাখ আয়োজন দেখেনি), ফলত এমন জুনিয়র ব্যাচদের বিভ্রান্ত করা সহজ।এই জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মতামত দেওয়ার মতো সঠিক জানা বোঝা হওয়ার আগেই তাদের মতামত নেওয়াটা প্রহশন মূলক। অন্যান্য সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ২৬ এর কেউ সেই মিটিং এ ছিলো না। আরেকটা প্রহশন হলো, অধিকাংশ বিভাগেই এই সাধারণ সভা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সঠিক সময়ে জানানো হয়নি, এমন কি কয়েকটি বিভাগে জানানো হয় সভা শুরুর পরে।
এই প্রহসহনমূলক সাধারণ সভাকে শিক্ষার্থীদের মতামত হিসেবে দেখিয়েই চারুকলার ৭০ তম ব্যাচ প্রকারান্তে ২৬ তম ব্যাচকে বৈশাখের আয়োজন করতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে ২৬তম ব্যাচ যখন এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে বিবৃতি প্রদান করে, সেসময় ২৬তম ব্যাচ এর সাথে একটি মিটিং করে প্রশাসন ও বলা হ্য় ২৬তম ব্যাচের ১৮ জনকে উপকমিটিতে বিশেষ বিবেচনায় আয়োজক হিসেবে জায়গা দেওয়া হবে।কিন্তু শিক্ষকদের দিক থেকে জুলাইয়ের আন্দোলনে স্বক্রিয় থাকা শিক্ষার্থীদেরো অহেতুক আওয়ামীলীগ ট্যাগিং থেকে শুরু করে বিবৃতিতে কি লিখতে হবে তা প্রিন্ট করে হাতে ধরিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতার দাপট দেখানোর এমন সব অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে ২৬ তম ব্যাচ উপকমিটিতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
পহেলঅ বৈশাখ উদযাপন নিয়ে তারা আরও বলেন, জাতিকে আমরা নিরুৎসাহিত করবো না, মঙ্গলশোভাযাত্রায় সকলের উপস্থিতি আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও কামনা করি। কিন্তু অনুষদের শিক্ষার্থীদের সাথে যেই অন্যায় হলো, প্রশাসনের কাছে আহবান থাকবে প্রশ্নবিদ্ধ সমস্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিবেন, প্রয়োজনে উপযুক্ত সময়ে একটি বাহাস আয়োজনের জন্যেও আমরা প্রস্তুত। আর যদি কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এড়িয়ে যান, বিগত সময়ের ছাত্রলীগের মতো সুবিধাভোগী ছাত্রদের যদি আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন, তাহলে আপনাদের স্বরণ করিয়ে দিতে চাই বিগত ফ্যাসিস্টের পরিনতি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১২ এপ্রিল) চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম মূল আকর্ষণ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থেকে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দিয়ে ফের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা এ তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ আগুনে পুড়ে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মাস্ক পরা একজন আগুন দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।