Your Ads Here 100x100 |
---|
নিউজ ডেস্ক
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ ছয় দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে সমাবেশ করেছে।
রবিবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে ঢাকা জেলার সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের পদোন্নতির বিষয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন— ‘আবু সাঈদ, মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দেশ গড়ার হাতিয়ার/ গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন/ প্রশাসন জবাব চাই’, ‘এসি রুমের বৈঠক আর নয়’, ‘পলিটেকনিক এক হও/ এক হও এক হও’—ইত্যাদি।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, “সকল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ভাইদের বলতে চাই, আমরা ১৯৮৭ সালের আন্দোলন ভুলে যাইনি; ২০১৩ সালের আন্দোলন ভুলে যাইনি। আমাদের ভাইয়েরা রাজপথে রক্ত দিয়েছেন, আমরা ভুলিনি।
“সবাইকে আহ্বান জানাই, আপনারা সকল সমাবেশে ঐক্যের ডাক দিন। এই আন্দোলন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের নয়—এটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রকৌশলী এবং পেশাজীবীসহ সকল কারিগরি সংশ্লিষ্ট মানুষের আন্দোলন।”
তিনি জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে পদোন্নতির জন্য দাখিল হওয়া রিটকে ‘কালো রিট’ আখ্যায়িত করে বলেন, “এই রিট অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি বাতিল না করা হয়, তবে আজ সমাবেশ, কাল বিক্ষোভ, পরশু দিন সারা বাংলাদেশে অবরোধ হবে।”
পরে এ শিক্ষার্থী নেতা জানান, পরবর্তী কর্মসূচি রাতেই ঘোষণা করা হবে।
এর আগে দুপুরে, ছয় দফা দাবি আদায় এবং কুমিল্লার কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে তারা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের নামফলক লাল কাপড়ে ঢেকে দেন, যাকে তারা আখ্যা দেন ‘রাইজিং ইন রেড’ কর্মসূচি হিসেবে।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের স্লোগান ছিল— ‘মামা থেকে মাস্টার, মামা বাড়ির আবদার’, ‘ডুয়েট যদি একটা হয়, ডিপ্লোমারা যাবে কই?’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘কারিগরিতে নন-টেক চলবে না’ ইত্যাদি।
গত শুক্রবার, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি আদায়ে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে রাজধানীতে গণমিছিল করেন। তার আগের দিন, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিকসহ দেশের বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তবে ওই দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও কোনো সমাধান হয়নি।
একই দিন রাতে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান খানকে অপসারণ করে তাকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয় ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ শাহেলা পারভীনকে।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি:
১. জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের পদোন্নতির হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ পদবি পরিবর্তন, ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগের বিধি বাতিল এবং সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নিয়োগ বাতিল ও মামলার প্রধান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স অব্যাহত রাখা এবং আধুনিক বিশ্বের আদলে মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রণয়ন।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদে শুধুমাত্র চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) পাস শিক্ষার্থীদের আবেদনযোগ্য রাখা এবং প্রাইভেট সেক্টরে ন্যূনতম ১৬,০০০ টাকা বেতন নিশ্চিত করা।
-
কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি গঠন করে পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ।
৫. কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
৬. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি পাস শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গেজেট আকারে অনুমোদন এবং প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ আসন নিশ্চিত করা।