Your Ads Here 100x100 |
---|
সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
তিস্তা নদী আজ আর প্রবাহমান নদী নয়; শুকনো মরুময় বুকে রূপান্তরিত হয়েছে এক বিশাল কৃষি আঙ্গিনা। উত্তর বাংলাদেশের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাজুড়ে তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চরাঞ্চল এখন ভুট্টা, ধান, আলু, পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষাসহ নানা ফসলে শোভিত। সরকারি প্রণোদনা ও কৃষি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগে এই অঞ্চলে চাষাবাদের পরিধি বেড়ে তিনগুণ হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য খুলে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনার দরজা।
গত অক্টোবরে ভারতের সিকিমে তিস্তার চুংথাং বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যার পানির সঙ্গে বিপুল পলিমাটি এসে জমে তিস্তার চরাঞ্চলে। এর প্রভাবে বালুময় জমি পরিণত হয়েছে উর্বর আবাদি ভূমিতে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, তিস্তার ৯০ হাজার হেক্টর চরজমির মধ্যে এ বছর রেকর্ড ৫০ হাজার হেক্টরে ফসল চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। ভুট্টা চাষ হয়েছে ২০ হাজার, ধান পাঁচ হাজার ও শাকসবজি-মসলা ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

তিস্তার চরে বসবাসরত কৃষক গুলজার খান বলেন, “নদীর পানি না থাকায় এবার চরের জমিতে তিন মৌসুমেই ফসল ফলিয়েছি। পলি মাটিতে ফলন এত ভালো হয়নি কখনো। ফসলের দামও লাভজনক।” অন্য কৃষক মিথুন কুমার যোগ করেন, “তিস্তাই এখন আমাদের ভাগ্যবিধাতা। ভুট্টা-বাদাম থেকে শুরু করে মরিচ-তামাক—সবই চাষ করছি। নদী শুকনো থাকলে আমাদেরই লাভ।”
হাতিবান্ধা উপজেলা কৃষি অফিসার কার্তিক কুমার জানান, চরাঞ্চলের কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ, বীজ ও প্রযুক্তি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “উর্বরতা বাড়ায় এ অঞ্চলে ধানসহ নগদফসলের চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।” কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ১৫০ চরে কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা ও বিপণন সুবিধা জোরদার করা হবে।

কৃষকদের মতে, আগাম বন্যা না এলে এবার রেকর্ড ফলন হবে। তবে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতা না থাকায় চরাঞ্চলের এই সাফল্য নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে চরের কৃষকদের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে মৎস্য চাষ ও গবাদিপশু পালনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
তিস্তার শুকনো বুকে ফসলের এই সোনালী সমারোহ কৃষি অর্থনীতিতে যোগ করছে নতুন মাত্রা। সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণে এই অঞ্চলকে কৃষি উৎপাদনের হাব হিসেবে গড়ে তোলাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।