31 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হলো ৩১ বাংলাদেশিকে

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির আওতায় গতকাল রোববার পর্যন্ত ৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্র।

ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর, গত ফেব্রুয়ারি থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ফেরত পাঠানোদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। সূত্র জানায়, যেসব বাংলাদেশি অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় পরাজিত হয়েও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন— মূলত তাদেরই ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ফেরত পাঠানোদের মধ্যে তিনজনকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা এসকর্টসহ ঢাকায় পৌঁছে দেন। অন্যদের সাধারণ যাত্রীর মতো ফেরত পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার, একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে পাঁচ বাংলাদেশিকে ঢাকায় আনা হয়। ফ্লাইটটি নেপাল হয়ে বাংলাদেশে আসে।

ফেরত আসাদের মধ্যে একজন, নোয়াখালীর শাহাদত হোসেন, বলেন— “গত ৯ মার্চ আমাকে ফেরত পাঠানো হয়। বিমান ভাড়ার পুরো খরচ বহন করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তারা আমাকে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তুলে দেয়। কোনো অসম্মানজনক আচরণ করা হয়নি, হাতকড়া পরানো হয়নি। আমি সাধারণ যাত্রীর মতোই এসেছি।” শাহাদত জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ অ্যাসাইলাম চেয়েছিলেন। তা অনুমোদিত না হওয়ায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি প্রায় ৯ মাস আগে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন।

পুলিশের বিশেষ শাখার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকার শুরু থেকেই জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে এসেছে। মার্কিন দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের অনুরোধ এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার কারণে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও জানান, অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে সামরিক বিমান ব্যবহৃত হলেও, বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে সাধারণ ও চার্টার্ড বিমানেই আনা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসী এবং ইসরায়েলের গাজায় চালানো হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতীয় নাগরিকদের সামরিক বিমানে হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, ঠিক কতজন বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে সরকারের কাছে এখনো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কেউ অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হলে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ দূতাবাসকে এমন ব্যক্তিদের তথ্য জানায়, যা পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। পুলিশের বিশেষ শাখা সেসব নথিপত্র যাচাই করে। এখন পর্যন্ত যেসব দফায় ৩১ জন বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয়েছে, প্রতিবারই বাংলাদেশ সরকারকে আগেভাগে অবহিত করা হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের হস্তান্তর করে, ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে রেজিস্টারে নাম লিপিবদ্ধ করে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস আগেই বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে অবহিত করে। এরই প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছে। বৈঠকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেশে ফিরেছেন, প্রয়োজনে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাককে সম্পৃক্ত করার বিষয়টিও বিবেচনায় আছে।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান জানান, “যেসব অভিবাসী বিদেশ থেকে ফেরত আসেন, বিমানবন্দরে ব্র্যাক তাদের সহযোগিতা করে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং ও আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসাদের ক্ষেত্রেও সরকার চাইলে ব্র্যাক সহায়তা দেবে।”

আরও জানা গেছে, গত সপ্তাহেও ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে গত শনিবার ফেরত পাঠানো পাঁচজন বাংলাদেশির বিষয়েও আলোচনা হয়। তাদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি নোয়াখালীতে, অন্য তিনজনের বাড়ি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের তদারকি করে তিনটি সরকারি সংস্থা— অফিস অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন, এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর ২৯ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অভিবাসীদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দেয়। এই প্রথমবার সরকারিভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর তথ্য প্রকাশ পেল।

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

কাপ্তাই হ্রদে তিন মাসের মাছ ধরা নিষিদ্ধ, বন্ধ থাকবে বরফকলও

নিউজ ডেস্ক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে তিন...