27 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর যে রহস্যজনক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হবেন নতুন ধর্মীয় নেতা

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

ইস্টার সোমবারে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে তিনি ছিলেন এক নির্লোভ, মানবিক ও সংস্কারমুখী নেতার প্রতিচ্ছবি।

ভ্যাটিকানের ক্যামেরলেনগো কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল এক বিবৃতিতে জানান, ‘আজ সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে রোমের বিশপ ফ্রান্সিস স্বর্গীয় পিতার সান্নিধ্যে ফিরে গেছেন। তাঁর সমগ্র জীবন প্রভু ও চার্চের সেবায় উৎসর্গিত ছিল।’

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষ ধর্মগুরুদের সংগঠন—কলেজ অব কার্ডিনালস—নতুন পোপ নির্বাচনের লক্ষ্যে ভ্যাটিকানে একত্রিত হবেন।

ঐতিহাসিক ‘কনক্লেভ’ প্রক্রিয়া

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কার্ডিনালরা রোমে এসে ‘কনক্লেভ’ নামক এক ঐতিহাসিক ও গোপন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন। এই শব্দটি লাতিন cum clave থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘চাবিসহ’ বা ‘অবরুদ্ধ বৈঠক’।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৭০টিরও বেশি দেশে ২২০ জনের বেশি কার্ডিনাল রয়েছেন। তবে ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে শুধুমাত্র ৮০ বছরের নিচে বয়স যাদের, এমন প্রায় ১২০ জন কার্ডিনালের।

গত এক দশকে পোপ ফ্রান্সিস এই ভোটারদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশকে নিজে মনোনীত করেছিলেন। ফলে নতুন পোপ নির্বাচনে তাঁর উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শনের প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।

প্রথা অনুযায়ী, পোপের মৃত্যুর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কার্ডিনালরা রোমে জমায়েত হন এবং সিস্টিন চ্যাপেলে তাঁদের পরামর্শ পর্ব শুরু হয়। এ সময় মাইকেলেঞ্জেলোর বিখ্যাত চিত্রকর্ম তাদের এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের সাক্ষী হয়।

পর্দার অন্তরালের গোপনতা

‘Extra omnes’—অর্থাৎ ‘সবাই বেরিয়ে যান’—এই ঘোষণার পর শুধুমাত্র কার্ডিনাল ভোটার, কিছু কর্মকর্তা এবং ডাক্তার চ্যাপেলের ভেতরে থাকতে পারেন। এরপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে ফোন, সংবাদপত্র, চিঠিপত্র—সবকিছু নিষিদ্ধ থাকে। এমনকি সম্ভাব্য নজরদারি সরঞ্জাম শনাক্ত করতে চ্যাপেল স্ক্যানও করা হয়।

এই পুরো সময় কার্ডিনালরা থাকবেন সেই সেন্ট মার্থা হাউসেই, যেখানে পোপ ফ্রান্সিস গত ১২ বছর ধরে বাস করছিলেন। সেখান থেকেই তাঁরা প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ভোট দিতে যান সিস্টিন চ্যাপেলে।

ভোট প্রক্রিয়া ও সাদা ধোঁয়া

কনক্লেভের সূচনা হয় এক পবিত্র মেস বা প্রার্থনাসভার মাধ্যমে। এরপর ব্যালট কার্ডে ‘Eligo in summum pontificem’ (আমি সর্বোচ্চ ধর্মগুরু হিসেবে নির্বাচন করছি) কথাটির নিচে নির্বাচিত ব্যক্তির নাম লিখে গোপনে ভোট দেন কার্ডিনালরা।

প্রতিদিন দু’বার করে ভোট হয়। প্রত্যেক রাউন্ড শেষে ব্যালট পুড়িয়ে ধোঁয়া বের করা হয়—যেখানে কালো ধোঁয়া বোঝায় ভোটে সিদ্ধান্ত হয়নি, আর সাদা ধোঁয়া ইঙ্গিত দেয় একজন নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।

৩০টি ব্যালটেও সিদ্ধান্ত না এলে, তখন সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনকে পোপ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ভ্যাটিকানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ কনক্লেভ হয়েছিল ১৯২২ সালে, যা পাঁচ দিন ধরে চলেছিল।

নতুন পোপের অভিষেক

নির্বাচিত পোপকে প্রথমে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করতে রাজি কি না এবং তিনি কোন নাম গ্রহণ করতে চান। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘Room of Tears’-এ, যেখানে তিনি সাদা পোশাক ও লাল স্লিপার পরিধান করেন। সেখানে বিভিন্ন মাপের পোশাক আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা থাকে।

সবশেষে, কার্ডিনালদের ডিন সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে ঘোষণা করেন—

‘Annuntio vobis gaudium magnum: Habemus papam’
অর্থাৎ, ‘আমি তোমাদের মহাসমাচার জানাচ্ছি: আমাদের একজন পোপ আছেন!’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

শেখ হাসিনা ফিরে এলে জনগনই ব্যবস্থা নিবে- বিএনপি মহাসচিব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ফ্যাসিবাদী চরিত্র নিয়ে শেখ হাসিনা আবারো ফিরে...