Your Ads Here 100x100 |
---|
নিউজ ডেস্ক
পাহাড়, জঙ্গল এবং পাথুরে পথ—এই কঠিন ভূপ্রকৃতির মধ্য দিয়ে ২২ ঘণ্টার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা।
তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—পেহেলগামের বাইসারান উপত্যকায় হামলার আগে কোকেরনাগের গভীর জঙ্গল থেকে পায়ে হেঁটে এসেছিল চার জঙ্গি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার—পর্যটকদের সমাগমে ভরা উপত্যকাটিকে রক্তাক্ত করা।
ভারতের ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া এই হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন। হামলার সময়, জঙ্গিরা দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়—একটি স্থানীয় বাসিন্দার এবং অন্যটি এক পর্যটকের। হামলায় অংশ নেয় মোট চার জঙ্গি—তিনজন পাকিস্তানি এবং একজন কাশ্মীরি, যার নাম আদিল ঠোকার।
তথ্য অনুযায়ী, আদিল ২০১৮ সালে হিজবুল মুজাহিদিনে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে লস্কর-ই-তৈয়বার ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নেন। যুদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর, ২০২৪ সালে ফের কাশ্মীরে ফিরে আসেন আদিল এবং সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়—পাকিস্তানি জঙ্গিদের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করা।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই চারজনের দলে আদিল ছিল স্থানীয় পথঘাটে অভিজ্ঞ। তার সহায়তাতেই বাকি তিনজন কঠিন পাহাড়ি পথ পেরিয়ে বাইসারানে পৌঁছে যায়।
ঘটনার দিন, স্থানীয় দোকানের পেছন থেকে বেরিয়ে আসে দুই জঙ্গি। তারা নিরীহ পর্যটকদের কাছ থেকে কালেমা পড়তে বলে, এরপর একে একে চারজনকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এই দৃশ্য মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, পর্যটকরা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। ঠিক সে সময়, জিপলাইন এলাকার দিক থেকে অন্য দুই জঙ্গি গুলি চালাতে শুরু করে।
ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে একে-৪৭ এবং এম৪ রাইফেল। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া গুলির খোসা এই তথ্যের প্রমাণ দিচ্ছে।
একটি গাছের উপর অবস্থান করে হামলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ক্যামেরায় ধারণ করেন এক স্থানীয় আলোকচিত্রী। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও তিনি তার ক্যামেরায় এই দৃশ্য বন্দি করেন। বর্তমানে তার ধারণকৃত ভিডিওটি তদন্তের মূল সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। বুধবার থেকেই বাইসারানে তারা ক্যাম্প স্থাপন করে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের জেরা করছে এবং হামলার আগমন ও প্রস্থান পথ খতিয়ে দেখছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, এটি শুধুমাত্র একটি হামলা নয়—এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হাত। বর্তমানে বাইসারান উপত্যকাজুড়ে চলছে চিরুনি তল্লাশি, যার উদ্দেশ্য—এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পুরো চক্রকে উদঘাটন করা।