28 C
Dhaka
সোমবার, জুন ১৬, ২০২৫

রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় মানবিক করিডোর স্থাপনে বাংলাদেশ সম্মত

জনপ্রিয়
- Advertisement -
Your Ads Here
100x100
নুর রাজু

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইনের মধ্যে একটি মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার প্রেক্ষিতে, সেখানে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের কাছে করিডোর ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছিল জাতিসংঘ। এই করিডোর ব্যবহারের জন্য কিছু শর্ত পূরণের প্রয়োজন রয়েছে।

গতকাল রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে করিডোর ব্যবহারের বিষয়ে সম্মত হয়েছি, কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা পাঠানোর মাধ্যম হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে। আপাতত সেগুলোর বিস্তারিত জানাচ্ছি না। শর্তগুলো পালন করা হলে আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বের কোনো মানবিক করিডোরই নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত নয়। যদিও সাধারণভাবে মানবিক সহায়তার জন্য করিডোর ব্যবহৃত হয়, তবে সেগুলোকে অপরাধীরা নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় মানবিক করিডোরের মাধ্যমে অনেক অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটিত হতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, “মানবিক করিডোর ব্যবহারের শর্ত জাতিসংঘকে দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। পরবর্তীতে এসব শর্ত নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হবে।”

জাতিসংঘ সম্প্রতি বাংলাদেশকে জানায়, রাখাইন অঞ্চলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে, যদি সেখানে দুর্ভিক্ষ নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে শুধু রোহিঙ্গাই নয়, ওই অঞ্চলের অন্যান্য নাগরিকরাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে মানবিক করিডোরের মাধ্যমে সহায়তা পাঠাতে চায় জাতিসংঘ।

গত অক্টোবর মাসে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP) একটি ১২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে রাখাইন অঞ্চলের অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং সামাজিক পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনের পণ্যবাহী আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, ফলে আয়ের উৎস সংকুচিত হয়েছে। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি, খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি এবং জরুরি সেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ শঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, কয়েক মাসের মধ্যে এই অঞ্চলের জনগণের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

বাংলাদেশ করিডোরটিকে মানবিক ত্রাণ পাঠানোর পথ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার, আরাকান আর্মি কর্তৃক কোণঠাসা হওয়ায়, সমস্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে, ত্রাণগুলো রাখাইন অঞ্চলের বেসামরিক জনগণের কাছে পৌঁছাবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এছাড়া, ত্রাণের পরিমাণ পর্যাপ্ত না হলে, নাগরিকরা একসঙ্গে হামলে পড়তে পারে।

এছাড়া, মিয়ানমারের এই অঞ্চলটি মাদক, অস্ত্র এবং মানবপাচারের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। করিডোরের মাধ্যমে এসব অবৈধ দ্রব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হতে পারে। তাছাড়া, রাখাইনে বর্তমানে কোনো স্বীকৃত প্রশাসন নেই, যার ফলে অস্থিরতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

জাতিসংঘের রোহিঙ্গাদের ত্রাণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। এখনও পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদার তুলনায় পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ফলে, মানবিক সহায়তা যথাযথভাবে বিতরণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে।

ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরের সময় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। তিনি বলেন, “সহিংসতা বন্ধ করা এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাধান খোঁজা প্রয়োজন। এতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পথ সহজ হবে এবং মিয়ানমারে মানবিক সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে।”

- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ

ইসরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বিদেশে কীভাবে কাজ করে?

বিভিন্ন সময় বিদেশের মাটিতে টার্গেট করে চালানো বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নাম এসেছে। বিশেষ করে এসেছে তাদের গোয়েন্দা...