Your Ads Here 100x100 |
---|
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে গুজরাটে সম্প্রতি শুরু হওয়া ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ শনাক্তকরণ অভিযানে রাজ্য পুলিশ এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করেছে, যাদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান।
গুজরাট রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল বিকাশ সহায় জানিয়েছেন, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৪৫০ জনের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণ মিলেছে।
বিকাশ সহায় সোমবার (২৮ এপ্রিল) সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানান, নথিভিত্তিক যাচাইয়ে এখন পর্যন্ত ৪৫০ জনকে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, এবং আরও অনেককে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভোররাতে শুরু হওয়া এই অভিযান প্রথমে আহমেদাবাদ ও সুরাত শহরে চালানো হয়, পরে তা গোটা গুজরাটে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযানে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে আটক হওয়া অনেকের ভারতীয় পরিচয়পত্রও রয়েছে।
ভারতীয় নাগরিক হয়েও ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক
গুজরাটের সুরাত শহরের বাসিন্দা সুলতান মল্লিক, যিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বাসিন্দা এবং সেখানে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এমব্রয়ডারির কাজ করছেন, তাকেও বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয়েছে। মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি জানান, রাত ৩টায় পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে এবং আধার কার্ড দেখতে চায়। এরপর মল্লিক এবং তার দুই ভাগ্নেকে আটক করে নিয়ে যায়।
বিবিসির কাছে মল্লিকের ভারতীয় পাসপোর্ট এবং ১৯৯৩ সালের জমির দলিলের কপির প্রমাণ রয়েছে, যা তার ভারতীয় পরিচয় নিশ্চিত করে। তবে, পুলিশ তাকে এখনও আদালতে হাজির করেনি, যা আইনের লঙ্ঘন।
বরযাত্রীও পুলিশের অভিযানে আটক
আহমেদাবাদে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী হিসেবে আসা মিজ. ফারজানার আত্মীয়দেরও পুলিশ আটক করে। তাদের মধ্যে কেউই বাংলাদেশি নয়, এমনকি বাংলাভাষীও নয়। মিজ. ফারজানা বলেন, “আমার ভাই আর ভাতিজা মহারাষ্ট্র থেকে এসেছিল। বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ তাদের আটক করে। আমাদের কাছে সব নথি ছিল, তবুও সারাদিন না খেয়ে বসে থাকতে হয়েছে ক্রাইম ব্রাঞ্চে।”
পুরোনো বাসিন্দাদেরও হেনস্থার শিকার
আহমেদাবাদের বাসিন্দা আলমআরা পাঠান জানান, তার ছেলে ও পুত্রবধূকে পুলিশ আটক করেছে, যদিও তাদের সব ভারতীয় নথি রয়েছে। তিনি বলেন, “২৩ বছর ধরে আমি আহমেদাবাদে আছি। আমার ছেলে এখানেই জন্মেছে, তবুও তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।”
পরিযায়ী শ্রমিকদের আতঙ্ক এবং দিশাহারা পরিবার
গুজরাটের ভারুচ জেলার পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার পরিযায়ী শ্রমিক নূর শেখ জানান, তার এক বন্ধু পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে, যদিও তার সব ভারতীয় নথি রয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ জানিয়েছে, শুধু গুজরাটেই নয়, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং ওড়িশা থেকেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের হেনস্থার একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
অন্যান্য রাজ্যে হেনস্থার অভিযোগ
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে মালদা জেলার ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে মারধর করে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদ থেকে ওড়িশায় যাওয়া ৬০ জন শ্রমিককে স্থানীয়রা মারধর করে এবং বাংলাদেশি হিসেবে অপবাদ দেয়।
প্রশ্ন উঠছে পরিচয় যাচাই এবং নাগরিক অধিকার
গুজরাট পুলিশ দাবি করেছে, আধার বা ভোটার আইডি কার্ড থাকলেই কেউ ভারতীয় তা নিশ্চিত নয়, কারণ এসব নথি নকল হতে পারে। এজন্য তারা সীমান্তবর্তী রাজ্য থেকে তদন্তকারী দল আনছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার আড়ালে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ভিত্তিক নজরদারি চলছে। ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ এর প্রধান আসিফ ফারুক প্রশ্ন তোলেন, “বাংলাভাষী এবং মুসলমান হলেই কি নাগরিক অধিকার খর্ব হবে? তারা কি ভারতের অন্য কোথাও কাজ করতে পারবে না?”